মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারি
সকাল পেরিয়ে দুপুর। সময় যত গড়াচ্ছে একে একে লোক জড়ো হচ্ছে সিলেট এম এ জি হাসপাতালের মর্গের সামনে। যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের চোখেমুখে লেগে আছে কান্নার ছাপ। কেউবা বিলাপ করছেন আবার কেউবা কাঁদছেন ফুপিয়ে ফুপিয়ে। কারণ তাদের মধ্যে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ স্বামী আবার কেউবা হারিয়েছেন ভাই।
আপনজন হারানোর বুকফাঁটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চত্বর। ওসমানী হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারিতে ছেয়ে গেছে উপস্থিত সকলের মন।
বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন।
নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামঞ্জের দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া একজনের বাড়ি নেত্রকোণা ও আরেকজন সিলেটের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: ‘কীভাবে গাড়ির গ্লাস ভেঙে বাইরে এসেছি তা একমাত্র আল্লাহ জানেন’
দুর্ঘটনায় আহত ঠিকাদার শের ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাই সায়েদ নুর (৬০) মারা গেছেন। আমি আছি অথচ আমার ভাই নাই। আর কোনোদিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজে যাওয়া হবে না। ভাই এভাবে হারিয়ে যাবেন আমি কল্পনাই করিনি।
বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করছেন দুর্ঘটনায় আহত মিজান বলেন, বাবাকে নিয়ে সকালে কাজের জন্য ওসমানীনগরের তাজপুর যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনায় আমাদের গাড়ির লোকজন ছিটকে গিয়ে ট্রাকের নীচে এবং রাস্তার উপর পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে আমার বাবাসহ ১১ জন এবং হাসপাতালে আসার পর কয়েকজন মারা যায়। কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।
চাচাতো ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মর্তুজ আলী বলেন, আমার ভাই আর নাই। আজ থেকে আমার আর কেউ আপন রইল না। আমার সব শেষ হয়ে গেল। এভাবে চলে যাবেন জানলে ভাইকে কাজে পাঠাতাম না।
সিলেটের মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহতদের স্বজনরা তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। মরদেহগুলো সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মাসুদ আহমদ রনি/আরকে