আশায় বুক বাঁধছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকালে ঢাকা পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফরে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী বিমানটি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুল হাতে স্বাগত জানান। পরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দুপুর ১২টার দিকে নরেন্দ্র মোদি স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান।
তার এ সফরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিনের ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন হতে পারে, এমন খবর এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। এতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তিস্তা পাড়ের কৃষক-জনতা।
তিস্তার পানিপ্রবাহে যাদের জীবন-জীবিকা তাদের আশা একটাই- মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে বহুল আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদিত হবে।
মোদির বাংলাদেশ সফরে তিস্তা পাড়ের কৃষক-জেলে-মাঝিদের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। যদিও তিনি আগে থেকেই বলেছিলেন, ‘তিস্তা নিয়ে করবেন না কোনো আলোচনা। তবুও দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশে মোদি এসেছেন। তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন।’
দেশের অন্যতম প্রধান এ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেলে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষাবাদে আসবে নতুন চাঞ্চল্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বিরূপ প্রভাব থেকে। শুধু তাই নয়, তিস্তা ফিরে পাবে তার পুরোনো দিনের খরস্রোতার চিরচেনা রূপ।
তিস্তা তীরবর্তী কৃষক রহিম, সাজু, রবিন চন্দ্রসহ অনেকেই জানান, তিস্তার পানি না থাকায় কোনো চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। যে সব ফসল আবাদ করা হচ্ছে তা বেশিরভাগ শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে। যার ফলে সেচ দিতে গুনতে হয়েছে বাড়তি খরচ। মোদি সরকারকে দ্রুত তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করার অনুরোধ করেন তারা।
নৌকার মাঝি মনোয়ার হোসেন জানান, বর্ষায় ফুলে ফেঁপে দুই কূল ভেঙে দাপিয়ে বেড়ানো তিস্তা নদী বসন্তের শুরুতেই যৌবন হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। মৃতপ্রায় তিস্তার বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিস্তা ব্যারাজসহ অসংখ্য সেতু। মাত্র বর্ষায় নৌকা চালালেও বছরের বাকি সময় বন্ধ থাকে। যার কারণে ধীরে ধীরে এ পেশা বদলে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে। তিস্তায় পানি থাকলে মাঝিরা আবারও ফিরে পাবে প্রাণ।
জেলে রহমান জানান, পানি আর মাছভর্তি তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে ধু ধু বালুচর। জমি জেগে উঠলেও সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই দূর থেকে পানি এনে বাঁচিয়ে রেখেছি ফসল। এদিকে, মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে তিস্তা পাড়ের জেলে পরিবারগুলো। নৌকা নয়, পায়ে হেঁটেই তিস্তা নদী পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএসআর