মৌসুমে দৈনিক ৫০০০ টাকা আয় করেন আনোয়ার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম অখণ্ডিত সৈকত এটিই। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সৈকত বালু ও কাদাময়। সারা বছরই কক্সবাজার থাকে পর্যটকময়। ঘুরতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন ছবি তুলতে এখানকার ফটোগ্রাফাররাই তাদের একমাত্র ভরসা।
১৮ বছর বয়সী আনোয়ার। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ফটোগ্রাফি করেন তিনি। তার দৈনিক আয় এখন প্রায় দুই হাজার টাকা। পাশাপাশি তিনি পরিবারকেও সহযোগিতা করছেন। দুই বছর ধরে সৈকতে ফটোগ্রাফি করে তিনি নিজের ভাগ্যকে বদলেছেন।
এ সমুদ্রসৈকতে আনোয়ারের মতো হাজারো তরুণ ফটোগ্রাফিকে কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ঢাকা পোস্টকে আনোয়ার হোসেন বলেন, তার বাবা হিমছড়ির বাজারের আচার ব্যবসায়ী। পরিবারকে সহযোগিতার জন্য তিনি ফটোগ্রাফিতে আসেন। দুই বছর আগে এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ফটোগ্রাফিতে নামেন তিনি। এরপর একটি স্টুডিও থেকে ক্যামেরা ভাড়া করে কাজ শুরু করেন। তিনি আরও জানান, মৌসুমে দিনে আয় হয় পাঁচ হাজার টাকা আর সাধারণ সময়ে হয় দুই হাজার টাকার মতো।
সরেজমিনে কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচে দেখা যায়, শত শত পর্যটক জড়ো হয়েছেন সাগরে গা ভাসাতে। তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত এখানকার ফটোগ্রাফাররা। তাদের কাঁধে ক্যামেরা আর গলায় আইডি কার্ড ঝুলছে। সব ফটোগ্রাফারের গায়ে লাল রঙের টি-শার্ট পরা।
ফটোগ্রাফার ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাল রঙের নির্দিষ্ট টি-শার্ট ছাড়া এখানে ফটোগ্রাফি করা যায় না। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ফটোগ্রাফারদের জন্য এ নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছে। যারা নিবন্ধিত হবেন, তারাই সৈকতে ফটোগ্রাফি করতে পারবেন।
সিলেট থেকে পর্যটক হিসেবে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন সামছুদ্দিন। এরপর তিনি এখানে ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের একজন প্রতিষ্ঠিত ফটোগ্রাফার। ২০০৫ সাল থেকে তিনি সৈকতে ফটোগ্রাফি করছেন। তাই ফটোগ্রাফিকেই তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
সামছুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কক্সবাজারে ঘুরতে এসে একজনের কাছ থেকে এখানের ফটোগ্রাফির অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিই। তারপর ঢাকায় চলে যাই। একটা ক্যামেরা কিনি পুরোদমে কক্সবাজারের সৈকতে ফটোগ্রাফিতে নেমে পড়ি।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে জানিয়ে সামছুদ্দিন বলেন, আগে আমরা ছবি তুলে দোকানে নিয়ে প্রিন্ট করে ডেলিভারি দিতাম। এখন পর্যটকদের হাতে হাতে তাদের স্মার্টফোনেই ছবি দিয়ে দিই। এ কাজ করে আমার প্রতি মাসে আয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
এদিকে ঘুরতে আসা পর্যটক সামাদ বলেন, যদি ছবির নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হতো, তাহলে পর্যটকদে জন্য সুবিধা হতো। এখানে ফটোগ্রাফাররা তাদের ইচ্ছেমতো ছবি তুলে অর্থ লুটে নেন। কিন্তু নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা থাকলে আমরা ভোগান্তিতে পড়তাম না।
প্রতারণা এড়াতে পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ডেটাবেইসের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যটকদের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি ফটোগ্রাফি পেশাকে আরও সুরক্ষা দিতেই তা করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সৈকত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার দেখাশোনা করে।
এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফটোগ্রাফারদের এই ডেটাবেইস করায় অনেক ইতিবাচক দিক হয়েছে। এতে পর্যটকরা প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারেছেন। পাশাপাশি সৈকতে ফটোগ্রাফি অনেক যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখি।
তিনি আরও বলেন, কোভিড সংক্রমণ রোধে পর্যটন স্পটগুলোর প্রবেশমুখে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মাঝে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ, হ্যান্ড স্যানিটাইজাইড করতে সহায়তাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এনএ