প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা পড়েছেন রুবাবা
দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের রুবাবা জামান। তিনি কালীগঞ্জ শহরের বড় বাজার এলাকার মৃত মিরুজ্জামান ও জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানের মেয়ে। দুই ভাই বোনের মধ্যে বড় রুবাবা।
জানা যায়, গত ২০ মে সারাদেশে বিভাগভিত্তিক গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ মে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন কালীগঞ্জের মেয়ে রুবাবা। তিনি চাইলে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে ইচ্ছা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবেন। তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। এই পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে সেখানেই পড়তে চান রুবাবা।
রুবাবা জামান ২০১৪ সালে নলডাঙ্গা ভূষণ শিশু একাডেমি থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। ২০১৭ সালে সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে পুনরায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। অপরদিকে ২০২০ সালে একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পান। ওই বছর যশোর বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েদের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০২২ সালে সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আবারও গোল্ডেন এ প্লাস পান। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায়ও রেখেছেন তিনি। এবার উপজেলা কিংবা বোর্ড নয় তিনি হলেন দেশসেরা তিনজনের একজন।
রুবাবা জামান বলেন, প্রতিদিন নিয়মিত ৮-১০ ঘণ্টা লেখাপড়া করায় ইতোপূর্বে বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবা করবো। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সবার কাছে দোয়া চাই।
রুবাবা জামানের মা পারভীন খান জানান, মেয়ের এই অর্জনে তিনি খুবই খুশি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার তিন মাস আগে তার স্বামী মারা যান। মেয়ের বাবা বেঁচে থাকলে আরও বেশি খুশি হতেন। বাবা না থাকায় চাকরির পাশাপাশি মেয়েকে সময় দিতে হয়।
কালীগঞ্জ সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুবাবা জামান নিঃসন্দেহে মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে ইতোমধ্যে সারাদেশে আমাদের কলেজসহ ঝিনাইদহ জেলাকে এক গৌরবের উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে। সে কলেজেও মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিল। কলেজের পক্ষ থেকে ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে তার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সে যেন দেশের সম্পদ হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রুবাবা তার অভ্যন্তরীণ প্রতিভাকে বিকশিত করতে পেরেছে। তাকে গড়ে তুলতে তার মাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। রুবাবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার মা তাকে দেশ ও জাতির সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলছে এজন্য তার মাকেও অভিনন্দন জানাই।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর