শতবছর ধরে ঝিনাইদহের যে গ্রামে কেউ বসবাস করে না
কোটচাঁদপুর উপজেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম। যার নাম মঙ্গলপুর। এই গ্রামে সবই আছে শুধু নেই মানুষের বসবাস। এভাবে পার হয়ে গেছে ৮ দশক। শুনতে অবাক হলেও ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের গ্রামের তালিকায় রয়েছে এই জনমানবহীন মঙ্গলপুর নামটিও।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারের মনির ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, লোক মুখে শুনেছি এমন এক গ্রাম আছে। আজকের এই আধুনিক যুগে এমন গ্রামের কথা শুনে দেখতে আসলাম। অনেকে বলেন ভুতুড়ে গ্রাম বা ভূতের গ্রাম। গ্রামে ঢুকলেই গা ছমছম করে। কেউ বলে আশি বছর আবার কেউ বলে শত বছর আগে গ্রামটি জনমানব শূন্য হয়েছে।
আরেক দর্শনার্থী শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, আজব এক গ্রাম মঙ্গলপুর। একেবারেই নিস্তব্ধ, চারিদিকে শুনশান নিরবতা। কিছু জায়গায় চাষ হলেও বেশিরভাগ জায়গাতেই জঙ্গলের অস্তিত্ব দেখা যায়। একটি ঈদগাহও আছে। অবাক করা ঘটনা হলো এখানে শতবছরেও মানুষের বসবাস গড়ে ওঠেনি সেখানে এখনো ঈদগার মিনার দাঁড়িয়ে আছে।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ গ্রামে এখনও রাতে মানুষ ঢোকে না কোনো এক অজানা ভয়ে। এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৬৬ নম্বর মৌজায় অবস্থিত গ্রামটি। তবে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ৯টি পরিবার বসবাস শুরু করেছে।
পাশের গ্রামের ইসলাম মিয়া জানান, শুনেছি এই গ্রামে এক সময় অনেক মানুষ বসবাস করতো। যার অধিকাংশ মানুষ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু হঠাৎ গ্রামে মহামারি কলেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ মারা যায়। তখন সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে 'গ্রামে অমঙ্গল কিছুর প্রবেশ হয়েছে' গ্রামের মানুষ অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে। কেউ আবার ভারতে চলে যান। একবারেই শূন্য হয়ে যায় মঙ্গলপুর। এখন এই গ্রামে শুধুই চাষাবাদ করা হয়। অনেক মানুষ কৌতুহলবশত একনজর দেখতে আসে গ্রামটিকে। আবার দিনের আলো থাকতে থাকতেই চলে যায় গ্রাম থেকে।
কোটচাদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মিজানুর রহমান খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারাও এমন গল্প শুনেছেন। কোনো এক মহামারি গ্রামটিকে জনশূন্য করে দিয়েছে। অনেকেই মারা যায়। কেউ আর থাকে না সেখানে। এখন শুধুই চাষাবাদ হয়। প্রায় সবই খাসজমি।
তিনি আরও বলেন, গ্রামের ভেতর মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব মেটাতে টিউবওয়েল পোতা হয়েছে। রাস্তায় সড়ক বাতি দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষের চলাচলে অসুবিধা না হয়। তারপরও মানুষের চলাচল খুবই কম। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সেখানে যায় না। গ্রামের ঢোকার পথে মূল রাস্তার পাশে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ৯টি পরিবারকে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে