দল থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবের অব্যাহতি নিয়ে ধূম্রজাল
পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করেছে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়। তবে এ বিষয় অনুসন্ধানে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মন্নান বলেন, এমন সিদ্ধান্ত হলে সেটা তো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতো। আমি এ বিষয় কিছু জানি না, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আপনারা কথা বলেন।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখন পর্যন্ত এ ব্যপারে কোনো চিঠি হাতে পাইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন খবর শুনতেছি।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মাহবুবুর রহমান তালুকদার বেফাস মন্তব্য করায় তাকে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি শোকজ এর জবাব দিয়েছেন। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভা করে মাহবুবুর রহমানকে দল থকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
তিনি আর বলেন, গত মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ১নং সহ সভাপতিকে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে যাবতীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এড. হারুন আর রশিদ বলেন, মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে যাবতীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি, ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে তা মূলত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার মাত্র। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে নিষেধ করেছেন। নিজেরা কাঁদা ছোড়াছুড়ি করায় বিএনপি সুবিধা নিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করবো।
তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক এবং শিক্ষা জীবনের যে জ্ঞান তাতে বলতে পারি জেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অব্যাহতি দিতে পারে না। তারা মূলত সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠাতে পারে এবং কেন্দ্র এ বিষয়ে বিশেষ করে দলীয় সভানেত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। আমার নামে যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে তা হলো সুপার এডিটের মাধ্যমে একটি কল রেকর্ডকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদারের সঙ্গে এক শ্রমিকলীগ নেতার মোবাইল ফোনের কথোপকথন ফাঁস হয়। এতে মাহবুবুর রহমান তালুকদার বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিব্বুর রহমান মহিবকে ‘রাতের ভোটের এমপি’ বলে মন্তব্য করেন।
এর প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন এ ঘটনার প্রতিবাদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের বহিষ্কারের দাবিতে লাগাতার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শুরু করে। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতির পদ থেকে মাহবুবুর রহমানকে অব্যাহতির সুপারিশ করে রেজুলেশন জেলা আওয়ালী লীগের কাছে পাঠানো হয়।
মাহমুদ হাসান রায়হান/এবিএস