জাল সনদের তালিকায় রাজশাহী বিভাগের ১০ শিক্ষক
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে ৬৭৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১৮ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রকাশিত তালিকায় রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর ১০ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে জাল সনদের তালিকায়। এর মধ্যে নগরীর একজন এবং বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার একজন করে মোট তিনজন রয়েছেন। এছাড়া নাটোরের সিংড়ায় দুজন, লালপুরে দুজন ও গুরুদাসপুরে একজন শিক্ষক। নওগাঁর মান্দার দুজন শিক্ষক রয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে ৬৭৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান-প্রতিনিধি সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক/কর্মচারীদের সনদের সত্যতা যাচাই পূর্বক ৬৭৮ জনের জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা, অবৈধভাবে গ্রহণকৃত বেতন ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরের সুবিধা প্রাপ্তি বাতিল করা, যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতা-কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাল সনদধারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা, জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের এবং জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
জাল সনদের তালিকায় রয়েছেন, রাজশাহী নগরীর শাহ মখদুম থানার মহানগর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক জাবিরুল ইসলাম, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মনোমহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের শিক্ষক হাফিজুর রহমান, নাটোরের লালপুর উপজেলার মনিহারপুর রাম কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ফিড কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং) সাইদুর রহমান, সিংড়া উপজেলার ভাগানগর কান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. সাবিনা ইয়াসমিন, একই উপজেলার আলহাজ আব্দুর রহিম উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক অনিতা প্রামাণিক, গুরুদাসপুরের চাপিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক লুবানা ইয়াসমিন, লালপুরের কলসনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবদুল জলিল, নওগাঁর মান্দা উপজেলার উত্তরা ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক পপি রাণী ও মান্দার চকউলী ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. মহসীন হাবিব।
এদের মধ্যে নাটোরের সিংড়া উপজেলার আলহাজ আব্দুর রহিম উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক অনিতা প্রামাণিক, নাটোরের গুরুদাসপুরের চাপিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক লুবানা ইয়াসমিন এবং লালপুরের কলস নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মী শিক্ষক আবদুল জলিল ছাড়া বাকিরা এমপিওভুক্ত নয়।
জাল সনদে চাকরি নেওয়া শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। এছাড়া জাল সনদে চাকরি নেওয়া শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়েও সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না অধ্যক্ষরা।
মহানগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাবিনা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে জেনেছি। জাবিরুল ইসলামের নিয়োগ হয়েছে ২০১৩ সালের প্রথম দিকে সাবেক অধ্যক্ষ মুক্তার হোসেনের সময়ে। তিনি মারা গেছেন। নিয়োগের পরে আরবির প্রভাষক জাবিরুল ইসলাম ওই সালের ১ নভেম্বর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। পরবর্তীতে আরবি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে সোলাইম হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে আগের প্রভাষক জাবিরুলের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এছাড়াও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মনোমহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানের নাম রয়েছে এই তালিকায়। তিনি দীর্ঘদিন আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার উত্তরা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবব্রত চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পলি রানী আর ক্লাসে আসেন না। সম্ভবত রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। তিনি অনেক দিন থেকে ক্লাস নেন না। রিজাইন দেওয়ার আগে নিয়মিত ক্লাস নিয়েছেন।
পলির নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, তার নিয়োগটা নিয়ম মেনে হয়েছিল সম্ভবত। তার নিয়োগের কাগজপত্র না দেখলে আমি তারিখ বা সাল বলতে পারব না। তবে পলির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো মুঠোফোন নম্বর নেই।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শারমিন ফেরদৌস চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কারণ দীর্ঘদিন থেকে যাচাই-বাছাই করে এই তালিকা করা হয়েছে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর