হামলা-মামলার প্রতিকার দাবি সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের
রংপুরে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসবের প্রতিকার এবং আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে হামলাকারীদের মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার এজাহার প্রত্যাহারের দাবি করা হয়।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া একটি আবেদনপত্রে এসব দাবি জানানো হয়। এর আগে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টু ও সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল।
এ সময় রংপুরে বিদ্যমান সকল সাংবাদিক সংগঠন ও কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম ‘সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ’ এর প্রসংশা করে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা বলেন, প্রত্যেক মানুষকে আইনি সেবা দেওয়াসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। আমরা সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছি। এক্ষেত্রে শুধু সাংবাদিক নয়, সকলকে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও বেশি তৎপরতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকদের আরও বেশি সজাগ, সতর্ক ও নিরাপত্তাগত বিষয়ে সচেতন থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি/অতিরিক্ত দায়িত্ব-সদর দপ্তর ও প্রশাসন) আবু বকর সিদ্দীক, উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান ও উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। এছাড়া রংপুরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুরসহ সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া আবেদনে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো- ১. আরটিভির বিভাগীয় প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বাদল, এশিয়ান টেলিভিশনের বিভাগীয় প্রতিনিধি বাদশা ওসমানি, দৈনিক দাবানলের স্টাফ রিপোর্টার একেএম সুমন, যুগের আলোর ফটো সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ইমরোজ ইমু, ভিডিও সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ও রাকিবুল ইসলামের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. আরটিভির জাহাঙ্গীর আলম বাদলের নামে পরশুরাম থানায় দেওয়া জামিনে থাকা হামলাকারীর মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলার এজাহার প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. যমুনা টেলিভিশনের সরকার মাজহারুল মান্নানের নামে সাইবার আদালতে দেওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দাখিলকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. রংপুরে কর্মরত সকল গণমাধ্যমকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের সময় ভয়ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে রংপুরের সকল সাংবাদিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও গণমাধ্যমকর্মীদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টুকে আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে সদস্য সচিব করে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের কমিটি গঠন করা হয়। এর দুদিন পর শনিবার রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় রংপুরে বিদ্যমান সকল সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদাধিকার বলে কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং রংপুরে কর্মরত সকল গণমাধ্যমকর্মীদের সাধারণ সদস্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এবিএস