জাহাঙ্গীরের চেয়ে আজমত উল্লাহর আয় বেশি
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তিন বছর মেয়র থাকার পরও জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদ ও আয় দুটিই কমেছে। স্বতন্ত্র মেয়র পদে নির্বাচনের লক্ষ্যে দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ টাকা। অথচ ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। বর্তমানে বার্ষিক আয়ে জাহাঙ্গীর আলমের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। দাখিল করা হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা।
পাঁচ বছর আগে জাহাঙ্গীর আলমের কৃষি খাত থেকে আয় ছিল দেড় লাখ টাকা, এবার কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও একই অঙ্ক দেখিয়েছেন। গতবার ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, এবার সে আয় কমে ৩ লাখ টাকা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ছিল ১৪.১৫ একর, এবার তার কোনো কৃষি জমি নেই। আগে অকৃষি জমি ছিল ৩৩.৭১ শতাংশ, এবার বেড়ে দাড়িয়েছে ৮১৫.২১ শতাংশ। আবাসিক সম্পদ ছিল ৭.৪৩ শতাংশ, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.১৫ শতাংশ।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে রয়েছে নগদ ৪০ লাখ টাকা, পাঁচ বছর আগে ছিল ৭ কোটি ৪৮ হাজার ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা আছে ৫০ হাজার টাকা, আগে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। এবার তিনি তালিকাভুক্ত ও নন তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম এপারেলসে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, আগের বার তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা। এছাড়াও জাহাঙ্গীরের দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক, একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আসবাবপত্র আগের মতোই রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকলেও এবার তার বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের বার্ষিক আয় জাহাঙ্গীরের চেয়ে বেশি। তার আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। এর মধ্যে আইনজীবী পেশা থেকে বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা, এর বাইরে শেয়ার সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক সুদ থেকে বার্ষিক আয় ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান। এছাড়াও লেখক হিসেবে বই বিক্রি করে বার্ষিক ১ লাখ টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমত উল্লাহর হাতে নগদ রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা। স্ত্রীর কাছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা রয়েছে। তার নিজের কোন গাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে।
আজমত উল্লাহর নিজের ২০ তোলা ও স্ত্রীর ৩০ তোলা সোনা রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার কোনো কৃষি জমি নেই। অকৃষি জমি হিসেবে নিজের নামে ১৪০.৬৩ শতাংশ, স্ত্রীর নামে ২৩৭.৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ৭ শতাংশ জমির ওপর তার নির্মাণাধীন বাড়ি আছে। আগে আজমত উল্লাহর নামে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা থাকলেও টঙ্গী থানার হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, অন্য দুটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এম এম নিয়াজ উদ্দিন
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিনের বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা, ব্যাংকে রয়েছে ২ লাখ টাকা। আছে ৫০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩.৬৬ একর কৃষি জমি ও ৭ বিঘা অকৃষি জমি। তার ঋণ রয়েছে পৌনে ৩ কোটি টাকা।
সরকার শাহনুর ইসলাম
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নুর ইসলাম রনির পেশা থেকে কোনো আয় নেই। তবে বাড়ি ভাড়া বাবদ তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তার স্থাবর সম্পদ নেই। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ২৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা সাড়ে ১০ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই, ৮ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ৯ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে, ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ২৫ মে।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোট নেওয়ার জন্য ৪৭৮টি কেন্দ্র থাকবে, কক্ষ থাকবে ৩ হাজার ৪৯১টি। এছাড়াও অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪৮৬টি। এছাড়াও প্রিজাইডিং অফিসার ৪৭৮ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৩ হাজার ৪৯১ জন, পোলিং অফিসার থাকবেন ৬ হাজার ৯৮২ জন।
নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থী, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৮২ জন তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
শিহাব খান/এসএসএইচ/