‘জীবনে প্রথম লাশঘরের সামনে ঈদ কাটলো’
‘রাত ১২টার দিকে শুনলাম ভাতিজা আনোয়ার হোসেন (৩৮) গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে। তারপর আর কিসের ঈদ। সবার ঈদ চাঁদ রাতেই মাটি হয়ে গেছে। রাতেই আনোয়ারের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মরচুয়ারীতে রাখা হয়েছিল। আমাদের ছেলেরা রাতে হাসপাতালে ছিল। সকালে অনেকেই বাড়ি ফিরে ঈদের নামাজ পড়ে আবার হাসপাতালে এসেছে। আমরা সকাল থেকেই হাসপাতালে বসে আছি। দুপুর ১টার পরে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। আমাদের জীবনে প্রথম ঈদ লাশঘরের (মর্গ) সামনে কাটলো।’
শনিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা আনোয়ার হোসেনের চাচা মোকলেস আলী।
আনোয়ারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাতে রাজশাহী নগরীর পবা নতুনপাড়ায় গলায় ফাঁস দেন আনোয়ার হোসেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা রাতেই তাকে রামেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি একই এলাকার মৃত মেসের আলীর ছেলে। এছাড়া সংসার জীবনে আনোয়ারের স্ত্রী ও আজমির নামে এক সন্তান রয়েছে।
নিহত আনোয়ার হোসেনের চাচাতো ভাই মোহন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনোয়ার নেশাগ্রস্ত ছিল। বিভিন্ন সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলা করতো। বেশ কয়েকবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ছিল। গতকাল রাতে হঠাৎ শুনলাম সে আত্মহত্যা করেছে। তারপর পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ঈদের আগের রাত, মানুষের কত কাজ থাকে। গত রাত থেকে এভাবে হাসপাতাল, থানা-পুলিশ করতে করতে গেছে। সকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসেছেন। তিনিও আমাদের সঙ্গে বসে আছেন। এর আগে আমরা রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলাম। হাসপাতাল থেকে রাত আড়াইটার দিকে শাহ মখদুম থানায় যাই। সেখানে কাজ শেষ করে রাত সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে ফিরেছি। সকালে কোনো রকম ঈদের নামাজ পড়ে আবার হাসপাতালে চলে এসেছি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ডোমরা আসেন। ঈদের দিন তারাও আসতে চাচ্ছিল না। তারা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে ঢোকেন। শুধু আমরাই নয়, আনোয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় সকাল থেকে হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ঈদের দিন মর্গে বসে থাকা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন স্বজনরাও রয়েছেন। তারও এমন পরিস্থিতির শিকার এই প্রথম।
রামেক হাসপাতালের ডোম তপন কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ আমাদের ছুটি ছিল। স্যারেরা বলল আসতে, আসলাম। ময়নাতদন্ত হলে মরদেহ তাদের দিয়ে দেব। আমরাও চলে যাব। উপায় নেই, আমাদের তো এটা কাজ, আসতেই হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের নামাজ শেষ করে মর্গের সামনে বসে আছি। ঈদের দিন মর্গের সামনে এভাবে বসে থাকা আমার নতুন অভিজ্ঞতা। তারা আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাদের বিপদে-আপদে আমাকে পাশে থাকতে হবে।
শাহ মখদুম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) উত্তম বলেন, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর