ঘুষ নিয়ে ফাইলে স্বাক্ষর করতে অফিসে এসেছিলেন বিসিক উপব্যবস্থাপক
ঘুষ গ্রহণ ও পেছনের তারিখে স্বাক্ষর করতেই অফিসে এসেছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) শরীয়তপুরের উপব্যবস্থাপক। গত ৩০ মার্চ তার বদলির আদেশ হওয়ার পর বিসিক আইন অনুযায়ী তিনি ছুটি ভোগ করছিলেন। দুদকের অভিযানের আগ মুহূর্তে বিসিক শরীয়তপুর কার্যালয়ের উপব্যস্থাপক মোহাম্মদ মনির হোসেন তার নিজ চেয়ারটি পাশে রেখে অন্য একটি সাধারণ চেয়ারে বসে ঘুষ গ্রহণ ও পেছনের তারিখে বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করছিলেন। দুদক টিমের সামনেই তিনি ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখের স্বাক্ষর করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ১টায় ঘুষ গ্রহণ ও পেছনের তারিখে ফাইলে স্বাক্ষর করার সময় ঘুষ ও ফাইলপত্রসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে গ্রেপ্তার হোন তিনি। ৫০ হাজার টাকা ও পেছনের তারিখে স্বাক্ষর করা ফাইলগুলো দুদক জব্দ করেছে। মাদারীপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চত করেছেন।
পটুয়াখালী জেলা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, আমি গত ৩০ মার্চ বরগুনা থেকে পটুয়াখীতে যোগদান করেছি। মোহাম্মদ মনির হোসেনের বরগুনা বিসিক কার্যালয়ে আগামী রোববার (০৯ এপ্রিল) যোগদান করার কথা ছিল।
দুদকের সমন্বিত মাদারীপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা এলাকার বিসিক শিল্প নগরীতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ১০০টি প্লট রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় তিনি প্রতারণা ও জিম্মি করে অর্থ আদায় করতেন। বিসিক শিল্প নগরীতে মনির হোসেনের স্ত্রী সুমির নামেও একটি প্লট রয়েছে।
দুদকের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া বিসিক উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনির হোসেনের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার উত্তর বাইকশা গ্রামে। ২০১৬ সালে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করে এ পর্যন্ত মোট ৩ বার দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৪ বছর মনির হোসেন বিসিক শরীয়তপুরের উপব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনির হোসেনের নিজ নামসহ তার স্ত্রী সুমি আক্তারের নামে শরীয়তপুরে পরিবহন ব্যবসা, শরীয়তপুরের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বাজার কাজীর হাটে মার্কেট রয়েছে।
মোহাম্মদ মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ট্রাপ মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে শরীয়তপুরের বিসিক কার্যালয়ে দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ জন দুদক সদস্যসহ ১২ জনের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানটির সার্বিক তত্ত্ববধায়নে ছিলেন মাদারীপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান।
দুদক সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ কেবলনগরের এস্কান্দার ঢালীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। এস্কান্দার ঢালীর শরীয়তপুর বিসিকে ‘ঢালী মিনারেল ওয়াটার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘মের্সাস বাংলাদেশ হারবাল অ্যান্ড স্পাইসেস প্রোডাক্টস’ নামে রূপান্তরের জন্য অফিস নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেন। নাম পরিবর্তন করতে বিসিক চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আবেদনটি পাঠানোর জন্য মোহাম্মদ মনির হোসেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এস্কান্দার ঢালী ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনির হোসেন তাকে ঘুষের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে এক পর্যায়ে এর আগে মনির হোসেনকে ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করে। এরপর মনির হোসেন আরও ৫০ হাজার টাকা ঘুষের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে এস্কাদার ঢালী দুদককে বিষয়টি জানান।
মাদারীপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, আবুল কালাম ঢালী ২০০৯ সালে বিসিক শরীয়তপুর থেকে ৪৫০০ স্কয়ারফিটের একটি প্লট বরাদ্দ পান। ২০১০ সালে তার চাচাতো ভাই এস্কাদার ঢালীকে প্লটটি দেখাশোনা করার জন্য দায়িত্ব দেন। বিসিকের শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘ঢালী মিনারেল ওয়াটার’ নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে না পারায় বিসিক প্লট বরাদ্দটি ২০১৪ বাতিল করে। ২০২২ সালের একটি আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের বাতিল আবেদনটি প্রত্যাহার করে বিসিক। খাত পরিবর্তন করে পূর্বের প্রতিষ্ঠানটির নাম পরির্তনের জন্য আবেদন করলে বিসিক শরীয়তপুরের উপ-ব্যবস্থাপক মনির হোসেন ঘুষ দাবি করলে দুদক অভিযোগ পেয়ে তাকে ঘুষসহ হাতে নাতে গ্রেপ্তার করেছে।
এমএএস