মধুর কেজি ৩০০ টাকা
কাঁঠালের রাজধানী হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের শ্রীপুরে মৌসুমি ফল লিচুর ফলন দিন দিন বাড়ছে। ফলে এদিকে নজর বাড়ছে কৃষকদের। জ্যৈষ্ঠর রসালো এই ফলে ভালো আয়ের সুযোগ থাকায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে লিচু চাষ। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো গাজীপুরের শ্রীপুরে বেশ কিছু জাতের লিচুর আবাদ হয়। স্বাদের দিক দিয়েও তা অতুলনীয়।
বসন্তের শেষ দিক। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচুগাছগুলো। মধুর ঘ্রাণে চারদিকে তৈরি হয়েছে স্বর্গীয় পরিবেশ। কৃষকের পরিচর্যার পাশাপাশি লিচু-বাগানে মৌয়ালদের ব্যস্ততাও বেড়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গাজীপুরের শ্রীপুরের টেপিরবাড়ী, কেওয়া, বারতোপা ও রাজাবাড়ী এলাকায় এবার ৭২৭ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান করা হয়েছে। চলতি বছর লিচুর সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। এ ছাড়া লিচুর মুকুল থেকে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ দশমিক ৭ টন। লিচুর মুকুলের এই ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে মধু উৎপাদনের দিকেই নজর সবার বেশি।
শ্রীপুর উপজেলা মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে শ্রীপুরে প্রায় অর্ধশত চাষি বিভিন্ন মৌসুমি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। মধু সংগ্রহের এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত রয়েছেন দুই শতাধিক চাষি। প্রতিবছর তাদের মূল লক্ষ্য থাকে লিচুর এই মৌসুম। কেননা, লিচু ফুলের এই মধু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। গত বছর করোনার কারণে মধু সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠবেন বলে জানান তিনি।
মৌচাষি আজিজুল হক জানান, তারা অনেকটা যাযাবরের মতো জীবন যাপন করেন। মৌসুম অনুযায়ী মৌমাছির ফ্রেমসহ চাকগুলো বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে হয়। তবে সবকিছুর থেকে লিচুর ফুলের মধু উৎপাদিত হয় বেশি। লিচুগাছে মুকুল আসার পর বাগান-মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে বাগানে তা স্থাপন করা হয়।
এক মাস ধরে দু-চার দিন পরপর মধু সংগ্রহ করা হয়। সরাসরি উৎপাদিত এই মধু বাগান থেকেই পাইকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরও ১৫ দিন মধু উৎপাদন করা যাবে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান বলেন, শ্রীপুরে লিচু চাষে অধিক আয় হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ চাষ। লিচু উৎপাদনের পাশাপাশি লিচুর মুকুল থেকে মধু উৎপাদনের মাধ্যমে একদিকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতিও স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। সঙ্গে লিচুর বাগানে মৌমাছির আনাগোনা তৈরি হওয়ায় পরাগায়নের মাধ্যমে অধিক ফলনও নিশ্চিত হচ্ছে।
এনএ