রমজানের আকাশে ব্যতিক্রমী চাঁদ, ছবি ভাইরাল
বাংলাদেশের আকাশে দেখা মিলেছে রমজানের ব্যতিক্রমী চাঁদ। সাধারণত চাঁদের ওপরে তারা দেখা যায়। কিন্তু প্রথম রমজানে চাঁদের নিচে তারা দেখা গেছে। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যার পর থেকে চাঁদ-তারার এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ঢাকা পোস্টের রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রংপুরের সবখানে চাঁদের নিচে তারা দেখেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন অনেকে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কলা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন,‘প্রিয়ার গলায় ঝুলে থাক চন্দ্রহার, ঝুলে থাক নক্ষত্র-লকেট।’
নাজমুস সাদাত তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের আকাশে আজ চাঁদ আর শুকতারা একই রেখায় দেখা গেছে, যা একটি বিরল ঘটনা।’
গবেষণাধর্মী লেখক রানা মাসুদ তার ফেসবুক ওয়ালে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘ইফতার ও নামাজ শেষ করে কেবল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়েছি। দেখি ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ। একাধিক ব্যক্তির। চাঁদের যেন কী হয়েছে! চাঁদের নিচে আরেকটা কী যেন জ্বলজ্বল করছে।’
আরও লিখেছেন, ‘অগত্যা ছাদে গেলাম গেজেট নিয়ে। হু একটা অসাধারণ দৃশ্য! চাঁদ তারার মিলন যেন মনে হলেও আসলে চাঁদের সাথে শুক্র গ্রহের একটা সমান্তরাল অবস্থান তৈরি হয়েছে। এটা মনে হলেও দূরত্ব কিন্তু বিস্তর। ফলে বিশাল শুক্র লাগছে ছোট্ট একটা তারার মতো।’
সংবাদকর্মী ফখরুল শাহীন বলেন, আমার জীবনের প্রথম দেখা চাঁদের নিচে সাথে লাগা তারা। যদিও চাঁদ তারার মধ্যে কিছুটা দূরত্ব ছিল। কিন্তু এর আগে এভাবে আমি কখনো চাঁদ এবং তারাকে এত কাছাকাছি দেখিনি।
এদিকে এ রকম ব্যাতিক্রম দৃশ্য দেখতে খোলা জায়গায় বা বাসার ছাদে ভিড় করেন অনেকে।
এমন একজন প্রকৃতি প্রেমী মামুন মিয়া বলেন, এমন দৃশ্য এই প্রথম দেখেছেন তিনি। এমন দৃশ্য দেখতে পেরে খুশি তিনি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মহুয়া শবনম বলেন, চাঁদ আর শুক্রগ্রহ বা শুকতারা একই রেখায় দেখা যাওয়ায় এমন দেখাচ্ছে।
বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কাস্তের মতো বাঁকা রমজানের চাঁদ সন্ধ্যার আকাশে। তার নিচেই বড় এক তারা। প্রথম দেখায় কেউ বুঝতেই পারবে না চাঁদ-তারার এমন যুগলবন্দি কেন? দৃশ্যটি আরবি ‘বা’ হরফের সাদৃশ। এই সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হতে সকলেই মুখ তুলেছিলেন আকাশে, ভিড় করেছিলেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
বরগুনা সদরের চরকলোনীর বাসিন্দা রমিজ জাবের বলেন, এমন অদ্ভুত চাঁদ আমরা কখনোই দেখিনি। আরেকজনের মুখে শুনে ঘরের সবাইকে নিয়ে দেখেছি। মূলত চাঁদের ঠিক নিচ বরাবর শুক্র গ্রহের অবস্থানের কারণেই চাঁদ ও তারাকে মিলে এমন অদ্ভুত লেগেছে।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ বরিশালের সংগঠক আনন্দ মৃত্তিকা নাজ বলেন, আজকে আমরা যেটি খুব বড় আকারে দেখছি এটি খুবই স্বাভাবিক নিয়ম। প্রতিনিয়তই এমন ঘটনা ঘটে হয়তো আমাদের চোখে এত বড় আকারে ধরা পড়ে না।
জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা এই সংগঠক বলেন, চাঁদ সঙ্গতই পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে। অক্ষপথে ঘুরতে গিয়ে অন্যান্য গ্রহ-গ্রহাণুপুঞ্জকে অতিক্রম করে। আমরা যাকে বলি সন্ধ্যা তারা সেটি আসলে তারা নয় সেটিও একটি গ্রহ। ওই গ্রহের নাম শুক্র। সন্ধ্যার দৃশ্যটি চাঁদ ও শুক্র একই সরল রেখায় ছিল বলে এত বড় করে দেখা গেছে। ওই সময়ে চাঁদ একটু পূর্বগামী ছিল। পর্যায়ক্রমে শুক্রকে ঢেকে দেবে চাঁদ। এটাকে বলা হয় চাঁদের আড়াল বা লুনার অলট্রেশন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম বলেন, চাঁদ, মঙ্গল এবং শুক্র একই রেখায় আসা বিরল ঘটনা। সেটি ২০৮০ সালের দিকে হতে পারে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় আমরা যেটি দেখেছি সেটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। চাঁদ ও শুক্র প্রায়ই একই অক্ষপথের কাছাকাছি এসে অতিক্রম করে। এজন্য এই দৃশ্যটি কখনো আমাদের নজরে আসে না, কখনো খেয়াল করি না।
রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চাঁদের নিচে তারা। আরবি হরফ ‘বা’ এর মতো দেখতে। এমন দৃশ্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যাচ্ছে। এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এমন দৃশ্য এই প্রথম দেখছেন তারা। এর আগে কারও চোখে পড়েনি। এমন দৃশ্যকে সবাই অসাধারণ বলছেন।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চাঁদ আর তারা একই সঙ্গে ছিল। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ থেকে দূরে সরে যায় তারা। ক্রমেই চাঁদের নিচের দিকে নেমে যায় তারা। এমন ঘটনা বিরল বলছেন অনেকেই।
মাইনুল হাসান জনি নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লেখেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ চাঁদ আর শুক্র গ্রহের এমন অবস্থা সত্যিই বিরল এবং অসাধারণ একটি দৃশ্য! এটি দেখতে অনেকটা আরবি হরফ ب (বা) এর মতো। চাঁদ ও তারা।’
নগরীর বুধপাড়া এলাকার সাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কোনো দিন এমন দৃশ্য দেখিনি। জীবনের প্রথম এমন দৃশ্য দেখলাম। অনেক সময় গভীর রাতে চাঁদের আশপাশে তারা দেখা যায়। কিন্তু এত কাছে কখনো দেখিনি।
একই এলাকার শামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বয়স ৬০ বছরের বেশি। আমি এর আগে কখনো এমনটা দেখিনি। আমার দেখা এটি সবচেয়ে বিরল দৃশ্য।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই, কী কারণে এমনটি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৃথিবীর সব কিছুরই কোনো না কোনো কারণ আছে। আজকে যে চাঁদের নিচে তারা দেখা গেছে, এটার পেছনে অবশ্যই সায়েন্স কাজ করছে। তবে ঠিক কী কারণে এ রকম দেখা যাচ্ছে সেটা বিজ্ঞানীরা আজও খুঁজে পাইনি।
ফারুক/মেহেদী/আশিক/আরএআর