সেই নাফিসের কপালে চুমু দিলেন শিক্ষামন্ত্রী
বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়ার সুযোগ পেয়েছেন চাঁদপুরের নাফিস উল হক ওরফে সিফাত (১৬)।
নাফিসের এই সাফল্যে শুক্রবার (১৭ মার্চ) চাঁদপুরে সরকারি কলেজে গিয়ে তাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। স্নেহ ভরে তার কপালে এঁকে দিলেন চুমু। পরে শিক্ষামন্ত্রী নাফিসকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর সরকারি কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের একজন ছাত্র নাফিস। সে দেশে-বিদেশে নানা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে অনেক পদক পেয়েছে এবং বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) সরাসরি ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে কিন্তু এখনো এইচএসসি পরীক্ষা দেয়নি, মাত্র দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। চাঁদপুরের জন্য গর্বের। নাফিস প্রযুক্তির চর্চা করেছে। তাই প্রযুক্তি আমাদের শিখতেই হবে। সবাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। এজন্য তোমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। নাফিসের জন্য দোয়া করি সে যেন সব সময় ভালো থাকে। আমি সব সময় তার পাশে আছি।
চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাটে নাফিসের বাড়ি। তার বাবা নাসির উদ্দিন মতলব মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক এবং মাতা কামরুন্নাহার বেগম হাজীগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষিকা। সে চাঁদপুর সরকারি হাসান আলী হাই স্কুল থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ -৫ পেয়েছেন। বর্তমানে সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
জানা গেছে, নাফিস যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) স্নাতক (সম্মান) কোর্সে পড়ার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ভর্তির জন্য যারা আবেদন করেন তাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিজস্ব পোর্টাল শেয়ার করে। এই পোর্টালের মধ্যে রেজাল্টসহ অন্যান্য সব আপডেট দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে নাফিস। তিনি আগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন।
এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে নাফিস উল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, আমি খুবই খুশি। আমার পরিবার,বন্ধুবান্ধব,শিক্ষকরা সবাই আমাকে সার্পোট দিয়েছে। বিশেষ করে একাডেমিক পড়াশুনা ঘাটতি সময় তারা আমার পাশে ছিলেন। এপ্লিকেশন করার সময় কলেজ থেকে আমাকে অনেক সহযোগিতা করা হয়েছিল। অলিম্পিয়াডের ন্যাশনাল ক্যাম্পের সময় ছুটি দেওয়া হয়েছে। আমার লাইফে কিছু মানুষের এবং স্যারদের অনেক অবদান আছে। তার মধ্যে হলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, কায়কোবাদ স্যার, সোহেল স্যার। তাদের সান্নিধ্যে থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি। আমি সব সময় চেয়েছিলাম, স্যারদের মতো হতে।
নাফিসের বাবা নাসির উদ্দিন জানান, আমি আল্লাহ কাছে শুকুরিয়া আদায় করি। আমার অনেক ভালো লাগছে। নাফিস অনেক পরিশ্রম করেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, কায়কোবাদ স্যার, সোহেল স্যারের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ওনাদের সহযোগিতার কারণে আমার ছেলে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে।
তার মা কামরুন্নাহার জানান, আমি খুবই খুশি। আমার ছেলে অনেক পরিশ্রমী। আল্লাহ তাকে আজকে এই অবস্থানে নিয়েছেন।
চাঁদপুর পুরান বাজার কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার জানান, নাফিসের এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সত্যিই আমাদের জন্য অহংকার এবং গর্বের। আমি মনে করি নাফিসদের কারণে স্মার্ট বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ জানান, আমি আনন্দদিত এবং গর্বিত। আমার কলেজের একজন ছাত্র ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে। এখন এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এমআইটিতে পড়ার অফারটি তার মেধার অন্যতম স্বীকৃতি। নাফিস আমাদের কলেজের গর্ব। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারব কিনা সে বিষয়ে যে সংশয় ছিল নাফিস সেই সংশয়টা অনেকাংশ দূর করে দিল। আমরা চেষ্টা করব এরকম আরও নাফিস তৈরি করতে।
আনোয়ারুল হক/আরকে