১৪ বছর পর এনআইডিতে নিজের ছবি পেলেন তিনি
২০০৮ সালে হাতে পান জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। সেখানে সব ঠিক থাকলেও নিজের ছবির জায়গায় ছিল অন্যের ছবি। এনআইডির সেই ছবি বদলাতে ১৪ বছর ধরে নির্বাচন অফিস ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেছেন মো. সামছুল হক নামে এক ব্যক্তি। অবশেষে সামছুল হকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে।
ছবি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়া সামছুল হক (৬৩) জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বীরনগর আটুল মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। কৃষিকাজের পাশাপাশি ছোট মুদি দোকান রয়েছে তার।
গত ৫ মার্চ দুপুরে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসেছিলেন সামছুল হক। তার হাতে ব্যাগ, আর তাতে ছিল কাগজপত্র। শুধু এনআইডির ছবি বদলাতে ১৪ বছরেরও বেশি সময়ে কতবার নির্বাচন অফিসে এসেছেন তা তারও মনে নেই আর। তবে এত ঘুরেও সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না তিনি। ওই দিনও তাকে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।
সে সময় মো. সামছুল হক জানান, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তিনি এনআইডি হাতে পান। সব ঠিক থাকলেও ছবি ছিল ভুল। তার ছবির স্থানে এলাকার দেবখণ্ডা দিঘিরপাড় আদর্শ গ্রামের মো. তহির উদ্দিনের ছবি ছিল। তার এনআইডিতে সামছুলের ছবি। এ নিয়ে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। তখন তহির ও সামছুল একসঙ্গে যাওয়াতে ভোট দিতে দেওয়া হয়েছিল। এর বছরখানেক পর তহির মারা যান। তারপর থেকে সামছুল মুশকিলে পড়েন। তহির উদ্দিন মারা যাওয়ায় এনআইডিতে একবার মৃতও দেখানো হয় সামছুল হককে।
এরপর এনআইডির ছবিটি পাল্টিয়ে নিজের ছবি দেওয়ার জন্য নির্বাচন অফিস ও জনপ্রতিনিধির কাছে ধরনা দিয়েছেন। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। এই সময়ে তিনি জমি কেনা, ব্যাংকঋণ নেওয়া, মোবাইল ফোনের সিম ওঠানোসহ নানা কাজে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছিলেন। এনিয়ে ঢাকা পোস্টসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সামছুল হককে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নজরে আসে। রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন সামছুল হকের এনআইডির বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে জয়পুরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে প্রতিবেদন দিতে বলেন। গত সোমবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তদন্ত করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেন। গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে সামছুলের এনআইডি সংশোধন করা হয়।
সামছুল হককেও তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমার এনআইডি সংশোধন হয়েছে। দীর্ঘদিন পর আমার এনআইডি সংশোধন হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামছুল হকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে। এনআইডিতে তার ছবি বসেছে।
চম্পক কুমার/আরএআর