নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারানো জাহিদ পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ

কাঁদছেন জাহিদ হাসানের মা-বাবা। পাঁচ বছর আগে পদ্মার ভয়াল ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো ইয়াসিন-হাসিনা দম্পতি অভাবের সংসারে প্রতিদিনই মনের গহীনে কষ্টের কান্না করলেও এ কান্না আনন্দের, বিজয়ের। কেননা এ বছর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তাদের ছেলে জাহিদ হাসান।
বিজ্ঞাপন
জাহিদ শরীয়তপুরের সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের পাইকবাড়ি গ্রামের দিনমজুর মো. ইয়াসিন বকাউল ও হাসিনা দম্পত্তির বড় ছেলে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২ হাজার ৪০২তম হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জাহিদ হাসান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাহিদ পেয়েছেন ৭৯ দশমিক ৭৫ নম্বর। তার মেরিট স্কোর ২৭৯ দশমিক ৭৫। এর আগে জাহিদ সকল পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
জাহিদ হাসান বলেন, নদীভাঙন ও দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারিনি। আমার সকল শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের পরামর্শ ও পাঠদানের ফলেই আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। আমার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করলেও আমাকে পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি মাঝেমধ্যে বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতাম। মা আমার সব বিষয়ে খেয়াল রেখেছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার সাফল্যের অংশীদার আমার খালা নয়নতারা ও মামা মানিক ছৈয়াল। কারণ তারা আমাকে আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি সকলের নিকট দোয়া চাই। আমি সাধারণ মানুষের সেবায় নিযুক্ত একজন আদর্শ নিউরোলজিস্ট হতে চাই।
বিজ্ঞাপন
জাহিদের বাবা ইয়াসিন বকাউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলের সাফল্যে আনন্দে কান্না করেছি। আল্লাহ গরিবকে পুরস্কার দিয়েছেন। আমার ছেলে যেন বড় ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
জাহিদের মা হাসিনা বলেন, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমার ছেলে বড় ডাক্তার হবে। নদীভাঙনের পর অনেক কষ্ট করেছি। আমার কষ্ট দূর হওয়ার পাশাপাশি গরিব মানুষের কষ্টও দূর হবে বলে আশা করি।
বিজ্ঞাপন
জাহিদ হাসানের প্রতিবেশী সুমন বকাউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহিদ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। জাহিদ ভালো ছেলে। সে ডাক্তার হলে চরের কোনো মানুষ বিনা চিকিৎসায় থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা চরবাসী জাহিদের জন্য দোয়া করি।
আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাওসার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহিদ মেধাবী ছাত্র। দুর্গম চরে এমন মেধাবী ছাত্র আমি কমই দেখেছি। আমার স্কুল থেকে সে বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার সাফল্যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। তার জন্য আমি প্রাণ খুলে দোয়া করি। কেননা একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো তার শিক্ষার্থীর সাফল্য।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া জাহিদ হাসানকে অভিনন্দন জানিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাহিদ তার স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে ডাক্তার হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। যে কোনো সমস্যায় উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।
এমজেইউ