ক্রেতা নেই, মুরগি নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
ব্রয়লার মুরগি ও সোনালি মুরগির দামের উত্তাপে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে যশোরের বড়বাজার। বিক্রেতাদের হাঁকডাকেও ক্রেতারা ফিরে তাকাচ্ছেন না মুরগির দিকে। দু-একজন ক্রেতা দেখা গেলেও তারা বেশির ভাগই অনুষ্ঠান ও বনভোজনের জন্য মুরগি কিনতে এসেছেন।
গত এক মাসে কয়েক ধাপে বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে মুরগি। ব্যবসায়ী এবং খামারিরা বলছেন- মুরগির খাবারের দাম কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ফিড ব্যবসায়ী এবং ডিলাররা।
সরেজমিনে সোমবার (৬ মার্চ) সকালে শহরের বৃহৎ আমিষের বাজার বড়বাজারের মুরগির দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের সমাগম একেবারে না থাকায় খাঁচা ভর্তি মুরগি নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রির উদ্দেশ্যে খাঁচায় রাখা মুরগির পেছনে খাবারের খরচের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ মুরগিও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মাসখানেক আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫০-১৭০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। অন্যদিকে সোনালি মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ৩০০ টাকা। আজকের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ক্রমেই বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুরগির দাম
ব্যবসায়ীরা জানান, মাসখানেক আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫০-১৭০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। অন্যদিকে সোনালি মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ৩০০ টাকা। আজকের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ক্রমেই বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুরগির দাম।
বড়বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, খামারের মুরগিকে সাধারণত নালিস ফিড খাওয়াতে হয়। মাস খানেক আগে এর দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ টাকা। সেখানে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে নালিস ফিড বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা আমাদের কাছে বাড়তি দামে মুরগি সরবরাহ করছেন। আমরা দু টাকা লাভ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।
পার্শবর্তী আরেক মুরগি ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, গরিবের শেষ ভরসাস্থল হলো ব্রয়লার মুরগি। সেটিও আজ নাগালের বাইরে। আমরা মুরগির ব্যবসা করেও বাড়িতে একটা মুরগি নিতে হলে ভাবতে হয়। গত দু-তিন দিন একটু ক্রেতা ছিল। ব্রয়লারের দাম ২৫০ টাকা শুনে এখন ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খাঁচার সবচেয়ে ছোট মুরগিটি খুঁজে কিনে নিয়ে ফিরছেন।
পিকনিকের বাজার করতে এসেছেন শহরের আরবপুর এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আবরার হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গরুর মাংস, খাসির মাংস স্বপ্ন। ব্রয়লার ছিল তাদের পরিবারে আমিষের চাহিদা মেটানোর একমাত্র ভরসা। সেটিও আজ নাগালের বাইরে। ব্রয়লার মুরগি একটা ধরে ওজন করলেই দাম আসছে ৪৫০-৫০০ টাকা। একজন নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনিক আয় ৪০০-৫০০ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ক্রেতারা বাজারমুখো হওয়া বন্ধ করে দেবে।
যশোর সার্কিট হাউসের সামনে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানদার বাশার আহমেদ বলেন, গত এক মাসে একবার ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। তখন ২২০ টাকা করে কিনেছিলাম। এরপর আর কেনার সামার্থ্য হচ্ছে না। মুরগির বাজারে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছি।
যশোর বড়বাজারে ফিডের দোকানদার ও ডিলারদের সঙ্গে মুরগির খাবারের দাম বাড়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে চাননি।
এদিকে খামারিরা বলছেন- খামারে মুরগি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
যশোর এক্সট্রা পোল্ট্রি ফিডের মালিক ও খামারি কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। খাবারের দাম যে তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় মুরগি বিক্রি করতে না পারলে খামারিরা লোকসানে পড়ে পথে বসবে। বড় বড় খাবারের ডিলার এবং কোম্পানিগুলো যোগসাজশ করে খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সকল ফিড কোম্পানির ওপর সরকারের নজরদারি করা উচিত।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং শুরু করেছি। মুরগি ব্যবসায়ী, ফিড ব্যবসায়ী কেউ এখানে ছলচাতুরী করে পার পাওয়ার সুযোগ পাবে না। অপরাধীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যশোরেও অভিযান শুরু করা হবে।
আরএআর