ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়িতে সয়লাব হাটবাজার, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
রংপুরের হাটবাজারগুলোতে ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সরকার নির্ধারিত ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ১৮ টাকা হলেও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন হাটবাজারে ২৫ শলাকা বিড়ি ৮, ৯ ও ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসব বন্ধে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল বিড়ি মালিক সমিতি ও বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের কার্যালয়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ করলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম্য।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগের দেবীগঞ্জ, লক্ষ্মীরহাট, বানুরহাট, সাকোয়া, বোদা, আটোয়ারী, পঞ্চগড়, টুনিরহাট, হাড়িভাষা, চাকলা, মডেলহাট, ভোজনপুর, কালামদীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া, বাংলাবান্ধা, জগদল, আমতলা, পানিডুবি, কালিয়াগঞ্জ, ভাউলাগঞ্জ, চিলাহাটি, রুহিয়া, লাহীড়ি, পাটিয়াডাঙ্গি, ভুল্লি, সবদল, গড়েয়া, কৈমারী, জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা বাজারে নকল ও জাল ব্যান্ডরোলবিহীন বিভিন্ন নামে বিড়ি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে ফ্রেশ বিড়ি, রনি বাংলা বিড়ি, ১নং ফ্রেশ বিড়ি, রকি বিড়ি, মিঠু বিড়ি, ১নং মিঠু বিড়ি, রানি বিড়ি, মেহেরাজ বিড়ি, স্টার আকিজ বিড়ি, নিউ সাদ বিড়ি, নাহার বিড়ি, লাটিম বিড়ি, পল্লী বিড়ি, মিতু বিড়ি, স্পেশাল নাহার বিড়ি, মেঘনা বিড়ি, মুকুল বিড়িসহ নামে-বেনামে ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।
বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আমিন উদ্দিন বিএসসি জানান, বিড়ি শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। আগের মতো বিড়ি ব্যবসা নেই। সরকার নির্ধারিত ১৮ টাকায় বিড়ি চালানো এমনিতেই কষ্টসাধ্য। তার মধ্যে কমদামি বিড়ি বিক্রি হওয়ায় বাজার নষ্ট হচ্ছে।
রংপুর জেলা বিড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম দিনার বলেন, জাল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়িতে বাজার সয়লাব। আমাদের জেলা সদস্য ১৯ জন ও বিভাগীয় সদস্য ৭০০ জন। জাল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি বন্ধে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আমরা যারা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা করছি, প্রতিনিয়ত আমাদেরই লোকসান হচ্ছে। আর যারা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে না, তারাই লাভবান হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা পুলিশ, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করলেও অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এ কারণে রংপুর অঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে এখনো ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ির বাজারজাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ির পাশাপাশি নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ির এই রমরমা বাজার থেকে মুনাফা লুটছে প্রতারক ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত প্রায় ৯ লাখ টাকার অনুমোদনহীন বিড়ি ও কাভার্ডভ্যানসহ একরামুল হোসেন (৩৫) নামে একজনকে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। ১নং স্টার বিড়ি লেখা নিবন্ধন বাতিল হওয়া এসব নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি রংপুরের হারাগাছ থেকে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এর আগে ২০২১ সালের জুনে হারাগাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার নকল ব্যান্ডরোলসহ রাজ্জাকুল ইসলাম (৪১) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছ থেকে ৬৬ হাজার নকল ব্র্যান্ডরোল উদ্ধার করা হয়। রাজ্জাকুল দীর্ঘদিন ধরে প্রতারক একটি চক্রের যোগসাজশে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে বিড়ির ব্যবসা করে আসছিল বলে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
একই বছরে গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে তিন বস্তা জাল ব্যান্ডরোলসহ আশিকুল ইসলাম (৩০) নামে একজনকে আটক করেছিল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এসব ব্যান্ডরোলের মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
হারাগাছ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বিভাগীয় কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বিড়ি নিবন্ধিত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৫০ থেকে ৬০টির নিবন্ধন বাতিল করেছি। বর্তমানে যারা আইন অমান্য করছে ও রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমরা চাই সবাই সরকারের আইনের আওতায় ব্যবসা করুক।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ