৪৫ কিলোমিটার যেন ‘মরণ ফাঁদ’
ব্যস্ততম সড়কে প্রতি মিনিটেই যাওয়া ও আসা করে বিভিন্ন যানবাহন। কিন্তু সড়কই যখন মরণ ফাঁদ হয় তখন চালক, যাত্রী ও পথচারীদের জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা মেলে। মাদারীপুরে ৪৫ কিলোমিটারের বেশি মহাসড়ক এখন মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে।
মাদারীপুরের সদর উপজেলার পুরান বাজার, কালকিনির উপজেলা ভুরঘাটা হয়ে বরিশালের যানবাহনগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতে বিকল্প সড়ক হিসেবে চলাচল করে আসছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে গর্তগুলো ভরাট করলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা আবার ভেঙে যাচ্ছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের মাদারীপুরের অংশ ৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্নস্থানে পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের গর্ত। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে পারে চালকসহ যাত্রীরা। মাদারীপুরের অংশের এ মহাসড়কটি কয়েক দফায় দফায় বিভিন্নস্থানে মেরামতের কাজ করা হয়েছিল। এখনো মেরামতের কাজ চলমান। কিন্তু যেখানে মেরামতের কাজ করা হয় সেখান থেকে কয়েক মাস পর পর এ সড়কের বিভিন্নস্থানে খানাখন্দ দেখা যায়। সংশ্লিষ্টদের দাবি পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় সড়কের এমন দশা।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরে মহাসড়কের মাদারীপুর অংশের বিভিন্নস্থান মেরামতে ব্যয় করা হয়েছে ৮২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য রাজন মাহমুদ বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক মেরামত করা হলেও সড়কের দিকে তাকালে মনে হয় মরণ ফাঁদ।
মাদারীপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেলাল রিজভী জানান, নিম্নমানের সামগ্রিক দিয়ে কাজ করায় সড়কের এরকম বেহাল দশা হয়েছে।
আলসানি পরিবহনের চালক সোহেল রানার বাড়ি বরিশাল। গাড়ি চালিয়েই চলে তার সংসার। তার অভিযোগ, রাস্তার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকার বাজেট হয়, কিন্তু রাস্তা ঠিক হয় না। আজ রাস্তা ঠিক করলে, কালকেই তা আবার নষ্ট হয়ে যায়। ভাঙা রাস্তার কারণে গাড়ি টানা খুব কষ্ট হয়। একটু ভারি মাল থাকলে গাড়ি উল্টে যায়।
স্থানীয় মস্তোফাপুর বাজার বাসিন্দা পারভেজ তিনি স্থানীয় বাসের সুপারভাইজার আক্ষেপ করে বলেন, ‘দু-দিন পর পর রাস্তা ঠিক করে, আবার নষ্ট হয়ে যায়। কী কারণে পিচ, পাথর উঠে জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে আছে বুঝি না মনে হয়! তার মধ্যে একটু বৃষ্টি এলে রাস্তা ডুবে যায়। মানুষ শান্তিতে চলাচল করতে পারে না।’
সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো.রায়হান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কলেজ খোলা প্রায় এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। মস্তফাপুর পার হলে বড়মেহের, চাপতি, তাঁতিবাড়ি সড়কটি মহাসড়কটি এমন খারাপ যা সুস্থ মানুষ গাড়িতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে দেখি রাস্তায় যেখান দিয়ে ঢালাই উঠে গেছে সেখানে মেরামত করে। এ মেরামত কী আজীবনই করে যাবে। না সুন্দরভাবে করবে, সুন্দরভাবে করলে তো তাহলে আমাদের আর কোনো কষ্ট হয় না।
গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক আনোয়ার শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক সংস্কারের সময় নিম্নমানের সামগ্রী দেওয়ায় এভাবে রাস্তার বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দুর্নীতির কারণে আজকে রাস্তার এই অবস্থা। এ কারণেই রাস্তা মেরামত করতে না করতেই আবার খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যায়।
বেপারী পরিবহনের যাত্রী বরিশাল টরকির বাসিন্দা রানা মোল্যা বলেন, তারা এমন ভাবে রাস্তার কাজ করছে যা দুই দিন যাইতে না যাইতে ভেঙে যায়। তারা কি রাস্তার কাজে হালকা পাতলা কিছু পট্রি দিয়ে খালি টাকাই নিয়েছে। যদি রাস্তার কাজ তারা ভালোভাবে করতো তাহলে আমাদের এই ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হত না।
মাদারীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণস্থানে সড়ক মেরামতের কাজ চলমান আছে। এছাড়া ভারি যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় সড়কের এ অবস্থা হচ্ছে। অতি তাড়াতাড়ি সড়কটিতে চার লেন করা হবে। তখন কোন আর সমস্যা থাকবে না। রাস্তার দুই পাশ শুরু হওয়ার কারণে রাস্তার যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। তাই দ্রুত উন্নতি করা হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিম্নমানের কাজ করাসহ সড়ক সংস্কারের নামে যদি কেউ অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তিকে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
রাকিব হাসান/আরকে