ফরিদপুরে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন দুদক সচিব

'জমি মিউটেশন করতে গিয়েছিলাম ৪০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল তহশিলদার। ১০ হাজার টাকা দিয়েছি তবুও কাজ হয়নি। কানুনগোকে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার পরও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি জমি। গণধর্ষণের মামলার আসামিকে বিদেশে পালাতে সাহায্য করেছে পুলিশ। আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাদক মামলায় চালান করেছে পুলিশ। মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে বিআরটির কর্মকর্তাকে। কলেজের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বেআইনিভাবে।
এরকম শতাধিক প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫টি সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।
রুখব দুর্নীতি, গড়ব দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ- স্লোগানে ফরিদপুরে বিভিন্ন সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের সরাসরি অভিযোগের গণশুনানির অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতেই উল্লেখিত অভিযোগগুলো তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী জেলা শহরের কবি জসীম উদ্দীন হলে এ গণশুনানির আয়োজন করে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) আক্তার হোসেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সভাপতি মো. শাহজাহান।
গণশুনানিতে বিভিন্ন অভিযোগ শ্রোতাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি করে। এক নারী অভিযোগ করেন তার ছেলে গাড়ি চালান। কিন্তু বিআরটিএ কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেওয়ায় তার ছেলের লাইসেন্স দিচ্ছে না।
তখন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানতে চান, আপনার ছেলে এখন কোথায়। উত্তরে ওই নারী জানান তার ছেলে আজ সকালে ভাড়া নিয়ে বেনাপোল গেছে। তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, লাইসেন্স না থাকলে পথে পথে পুলিশ গাড়ি আটকায় না? তখন ওই নারী বলেন, পুলিশ গাড়ি ধরলে ৫০০ টাকা ঘুষ দিলে গাড়ি ছেড়ে দেন। এ সময় অতিথি ও শ্রোতাদের মধ্যে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অকারণে দেরি করা কিংবা বার বার হয়রানি করা এক ধরনের দুর্নীতি।
তিনি বলেন, সরকারি পরিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই গণশুনানির মূল কারণ বলে জানানো হয়। দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন, এই গণশুনানিতে জেলার ২৫টি সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪৫টি বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টার দিকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার এ গণশুনানির উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেন আয়োজক ও অতিথিরা। পরে প্রতিটি বিভাগ ধরে ধরে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য মঞ্চের একদিকে অভিযোগকারী এবং অপরদিকে সংশ্লিষ্ট অফিসের উত্তর দেওয়ার জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে এ গণশুনানি শেষ হয়।
জহির হোসেন/এমএএম