উকিল-মোক্তার নেই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুনানি করছেন আসামিরা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা অনেকদিন ধরে বর্জন করে আসছেন সেখানকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার থেকে তারা আবার সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের সেই কর্মসূচির মধ্যেই আদালতে শুনানি হচ্ছে। জামিন মিলছে আসামির, নিষ্পত্তি হচ্ছে মামলার।
অনেক দিন ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আইনজীবীরা অংশ না নেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিচারপ্রার্থীরা/আসামিরা নিজেরাই আদালতে শুনানি শুরু করেন। এভাবে নিজে নিজে শুনানি করে মঙ্গলবার জামিন পেয়েছেন দুই আসামি। আর আজ বুধবার দুটি মামলা নিষ্পত্তিও হয়েছে বিচার প্রার্থীদের শুনানিতেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবীরা গত ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে শুনানি বর্জন করে আসছেন। এতে অসংখ্য মামলার শুনানি ব্যাহত হচ্ছে। গত ২২ কার্যদিবসে প্রায় ২ হাজার মামলার শুনানি ব্যাহত হয়।
এ অবস্থায় বিচারপ্রার্থীরা নিজেরাই মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। গতকাল ৫৭টি মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে দুটি মামলায় আসামিরা জামিন পেয়েছেন।
আজ বুধবার ৬৩টি মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা নিজেরাই শুনানি করেন। এর মধ্যে দুটি মামলা উভয়পক্ষের সম্মতিতে নিষ্পত্তি করে দেন আদালত। এর মধ্যে একটি মামলায় বাদী মদিনা বেগম তার প্রতিবেশী খায়ের মিয়ার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা উঠিয়ে নেন। অপরটি গত ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট দায়ের করা। সেতু আক্তার নামে এক নারী তার স্বামী তারেকের বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে মামলা করেছিলেন। আজ তিনি আদালতের মাধ্যমে উঠিয়ে নেন।
সকাল ১০টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি দুইজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘সারা জীবন এজলাসেই থাকবা কি না? কোনো সময় কি নামতে হবে না?’ তিনি জজ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে কী পাইসে, বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে কইলাম।’
এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আইনে বলা আছে, কেউ যদি কোনো মামলা নিজে পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে কোনো বাধা নেই। নিজেই মামলার শুনানি করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা এখানে নিজেদের কাজ করতে আসিনি, আইনের কাজ করতে এসেছি। এজলাসে আমি উঠতে বাধ্য যদি উচ্চ আদালতের নির্দেশ বা কোনো আদেশে আমাকে বদলি করা না হয়। তবে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছি।
আদালতের পেশকারকে হুমকি
এদিকে, আজ সকাল ১০টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাতকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা এজলাসে এসে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাত অভিযোগ করে বলেন, আমি আদালতে কাজ করছিলাম। সকাল ১০টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি দুইজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘সারা জীবন এজলাসেই থাকবা কি না? কোনো সময় কি নামতে হবে না?’ তিনি জজ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে কী পাইসে, বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে কইলাম।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি আদালত চত্বর ঘুরে এসেছি কিন্তু ভেতরে যাইনি। আমাদের আন্দোলন চলমান। গতকাল আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, মিডিয়ায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে আইনজীবীরা অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
বিপরীতে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা।
এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এদিকে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দুই দফায় তলব করে উচ্চ আদালত।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে অন্যান্য আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু দাবি না মানায় আজ বুধবার থেকে আবার সব আদালত বর্জন শুরু করেন আইনজীবীরা।
বাহাদুর আলম/এমজেইউ/জেএস