‘আমার ছেলে সাকিবকে এনে দেও, অন্ধকার কবরে ও একা থাকবে কীভাবে’
‘আমার আদরের ছেলে সাকিবকে তোমরা এনে দেও। ওরে তোমরা কোথায় রেখে আসলা। অন্ধকার কবরে ও একা থাকবে কীভাবে। আমি আমার কলিজার টুকরা সাকিবকে ছাড়া কীভাবে থাকব। ও আমার নয়নের মনি ছিল।’ বুক ফাটা কান্না আর আত্মচিৎকারে এভাবেই প্রলাপ করছিলেন ট্রাকচাপায় নিহত ১১ বছর বয়সি সাকিবের বাবা চন্দনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রব শেখ।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ধাওয়াপাড়া-বাগমারা সড়কের দায়লনগর নতুন রাস্তা এলাকায় বালু বোঝাই ট্রাকচাপায় দুই চাচাতো ভাই শেখ মো. মাহফুজুর রহমান সিফাত (১৮) ও সাকিব (১১) মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়। তারা দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে রাজবাড়ী যাচ্ছিল।
সাকিব সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ধাওয়াপাড়া গ্রামের শেখ মো. আবদুর রবের ছেলে। শেখ মো. আবদুর রব চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মোটরসাইকেল চালক সিফাত লোকমান শেখের ছেলে। সাকিব ও সিফাত চাচাতো ভাই। সাকিব ধাওয়াপাড়া এলাকার চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সিফাত রাজবাড়ী সরকারি কলেজের মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
জানা গেছে, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিফাত ও সাকিব দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সিফাত রাজবাড়ীতে প্রাইভেট পড়তে এবং সাকিব রাজবাড়ীতে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। তারা ধাওয়াপাড়া-বাগমাড়া সড়কের দায়লনগর নতুন রাস্তা এলাকায় পৌঁছালে দ্রুত গতির বালু বোঝায় ড্রাম ট্রাক তাদেরকে চাপা দিলে তারা ঘটনাস্থলে নিহত হন। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্রই রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মার্জিয়া সুলতানা, সদর থানার ওসি শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও রাজবাড়ীর সর্বস্তরের মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করে। বাদ মাগরিব জানাজার নামাজে অংশ নেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী ও হাজার হাজার মানুষ। এরপর জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সাকিব ও সিফাতের মরদেহ দাফন করা হয়।
সাকিবের আপন ছোট চাচা শেখ আবদুর রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাকিব আমাদের পরিবারের সকলের খুব আদরের ছেলে ছিল। রব ভাই সাকিবকে অনেক ভালোবাসতো আদর করতো। কখনো কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি সে। সাকিবের অকাল মৃত্যু পরিবারের কেউ মেনে নিতে পাড়ছে না। রব ভাই তার ছেলেকে হারিয়ে যেনো পৃথিবীটাকেই হারিয়ে ফেলেছে।
চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের রব ভাইয়ের মেজো ছেলে সাকিব ও তার ভাতিজা সিফাত ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে। দুই ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আসলে সন্তান হারানোর বেদনা অনেক কঠিন যা ভাষায় বলে প্রকাশ করা যায় না। গতকাল বাদ মাগরিব জানাজার নামাজ শেষে তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান শাহিনুর জানান, চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. রব ভাইয়ের ছেলে ও ভাতিজার এমন মর্মান্তিক অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। পুরো গ্রামসহ জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা শিশুদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আল্লাহ যেন ওদের কে বেহেস্তবাসী করেন। পাশাপাশি বাবা-মাকে এ শোক সহ্য করার ক্ষমতা দান করুক।
রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে ট্রাক ও চালককে আটক করেছে। গতকাল স্থানীয়রা রক্তাক্ত দুই ভাইকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
মীর সামসুজ্জামান/আরকে