বেঁচে থাকতে স্বজনদের কাছে যেতে আকুতি জানিয়েছিলেন বৃদ্ধা
একটা সময় স্বামী, সন্তানসহ সুখের সংসার ছিল। এক যুগ আগে স্বামী, সন্তানকে হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। ফেনীর ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাফেজা খাতুনকে তিন বছর আগে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর সদস্যরা। তখন থেকেই কিছুটা মানসিক সমস্যা ও বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ বৃদ্ধার স্থান হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতালের করিডোরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রচারণা চালিয়েও তার স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিন বছর ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর (১৩ মার্চ) মৃত্যুবরণ করেন। জীবিত থাকতে কেউ খোঁজ না নিলেও মৃত্যুর পর খোঁজ মিলল বৃদ্ধা হাফেজা খাতুনের স্বজনদের। রোববার (১৪ মার্চ) বিকেলে নিহত হাফেজার বোনের ছেলে মো. ফখরুল ইসলামের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের প্রস্তুতির খবর প্রচার হলে হাফেজার স্বজনরা জানতে পারেন। পরিচয় পাওয়ায় সরকারি কবরস্থানে লাশটি দাফন না করে রোববার বিকেলে স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সহায়ের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদকর্মী দুলাল তালুকদার বলেন, বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়েও হাফেজার স্বজনদের খোঁজ মেলেনি। কিছুদিন ধরে হাফেজা পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি। শনিবার রাতে তার মৃত্যুর খবর পুনরায় প্রচার করা শুরু করি। রোববার দুপুরের দিকে তার স্বজনরা মর্গে এসে লাশটি শনাক্ত করেন।
রোববার বিকেলে নিহত হাফেজার বোনের ছেলে মো. ফখরুল ইসলাম লাশটি গ্রহণের সময় জানান, কয়েক বছর আগে হাফেজা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তার বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে। তিনি আন্ত আশরাফ ভুঁইয়া বাড়ির আবদুল হকের মেয়ে। পারিবারিক সিদ্ধান্তে হাফেজার মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সমাধি করা হবে।
ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার করিডোরে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন হাফেজা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের তত্ত্বাবধানে গত তিন বছর তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জীবিত থাকতে হাফেজা খাতুন বলেছেন, তার স্বামী আবদুর রশীদের সঙ্গে তার সুখের সংসার ছিল। বেলাল নামে তাদের এক ছেলেসন্তান ছিল। হাফেজা খাতুনের দিনমজুর স্বামী মারা গেছেন এক যুগ আগে। তার একমাত্র সন্তান বেলালও মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলের মৃত্যুর পর পাগলপ্রায় ছিলেন তিনি।
বাড়ির ঠিকানা না বলতে পারলেও বিক্ষিপ্তভাবে তিনি বলছেন, তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে হাফেজা খাতুন সবার ছোট। বেঁচে থাকতে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে বারবার আকুতি জানিয়েছিলেন, কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেননি।
হোসাইন আরমান/এনএ