ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নের বাড়িতে খাবার নেই জেনে ছুটে গেলেন ইউএনও

বিভাগীয় কমিশনার ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও হ্যান্ডবল (শীতকালীন) প্রতিযোগিতায় ব্যাডমিন্টন খেলায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মেয়ে মোছা. রাবেয়া খাতুন (১৪)। তার স্বপ্ন বড় হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসন আয়োজনে কুষ্টিয়া শেখ কামাল আধুনিক স্টেডিয়ামের ইন্ডোর কক্ষে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় সদর উপজেলাকে হারিয়ে সে চ্যাম্পিয়ন হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু রাবেয়া খেলায় চ্যাম্পিয়ন হলেও তার ভ্যানচালক বাবা জীবন যুদ্ধে পরাজিত। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সপ্তাহখানেক হলো তিনি (বাবা) কর্মক্ষম। গচ্ছিত খাবার ও টাকা ফুড়িয়ে গেছে তার। রাতে বাড়িতে খাবার নেই। চুলা জ্বলেনি। এমন খবর সন্ধায় পৌঁছে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কানে। খবর পেয়ে দ্রুত তিনি রাবেয়াকে ডেকে নিয়ে পৌরবাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, আলু, মরিচ, বেগুন, শাক-সবজি, মুরগির মাংস, মিষ্টি নিয়ে ছুটে যান তার বাড়িতে।
রাবেয়া কুমারখালী পৌরসভার খয়েরচারা গ্রামের ভ্যানচালক মো. মামুন হোসেনের মেয়ে ও তেবাড়িয়া শেরকান্দি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে সে শীতকালীন জাতীয় শিশু পুরস্কার-২০২২ এ আন্তঃস্কুল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় দেশের সেরা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবে রাবেয়া।
ছোটবেলা থেকেই রাবেয়া ফুটবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, উচ্চ লাফ, ব্যাটমিনটন, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় সমান পারদর্শী। আর্থিক ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে সে। ৫০তম আন্তঃস্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির উদ্যোগে (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) গোলাপ অঞ্চলের শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উচ্চ লাফে প্রথম স্থান অর্জন করে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও ঢাকা জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০২২ এ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগের কাছে হেরে দেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হয় তিনি। এবার বিভাগীয় কমিশনার ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও হ্যান্ডবল (শীতকালীন) প্রতিযোগিতা-২০২৩ এর ব্যাডমিন্টন খেলায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সে আগামী ২৭ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবে।
রাবেয়া খাতুন বলেছে, বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে দেশসেরা খেলোয়ার হতে চাই। কিন্তু বাবার সেই সামর্থ নেই। আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৭টি খেলায় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি। রাখার জায়গা নেই, সেগুলো ভাঙা ঘরের বেড়ায় রেখে দিয়েছি। সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে আমিও একদিন হতে পারি সেরাদের সেরা।
বিজ্ঞাপন
ভ্যানচালক বাবা মামুন হোসেন বলেন, অন্যের ভ্যান ভাড়ায় চালাই। মা, বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ সাতজনের সংসার। সপ্তাহখানেক শারীরিক অসুস্থতার কারণে বের হতে পারিনি। জমানো টাকা ও খাবার শেষ হয়েছে আজ (রোববার) সকালে। ইউএনও স্যার চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজিসহ অনেক খাবার দিয়েছেন। স্যারকে ধন্যবাদ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, রাবেয়া দারিদ্র্যতাকে জয় করে খেলাধুলায় এগিয়ে চলেছেন। এর আগে তাকে মানসম্মত খেলার সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়ে আজ আবার জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। একটি মাধ্যমে জানতে পারি রাতের খাবার নেই তাদের। জানতে পেরে দ্রুত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে রাবেয়াকে নিয়ে।
রাজু আহমেদ/এমএএস