পঞ্চগড়ে রোদের দেখা মিললেও তাপমাত্রা নামল ৬ ডিগ্রিতে
সকালে সূর্য হেসে উঠলেও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়ে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৬ ডিগ্রিতে। বইছে কনকনে শীত। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের শীতের দাপটে নাজেহাল হয়ে পড়েছে উত্তরের এ জেলা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত তিনদিন তাপমাত্রা বাড়লেও আজ নেমে এসেছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রিতে। গতকাল শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এ জেলায় স্মরণকালে এ জেলায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের মুখ। তবে অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড শীত। সুর্যের মুখ দেখা গেলেও মিলছে না রোদের উষ্ণতা। শীত দুর্ভোগে পড়েছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরীব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন ভ্যান চালক মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বিকেল গড়ালে শুরু হয় হিমেল হাওয়া। সে হাওয়ায় প্রবাহিত হতে থাকে কনকনে শীত। সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে শীতের তান্ডব। মধ্যরাত থেকে ভোর অবধি পর্যন্ত বরফের হিমাঞ্চল হয়ে উঠে এ জেলা। স্থানীয়রা জানায়, দিনের চেয়ে রাতের শীত বেশি মনে হয়। পুরো রাত বরফের মতো লাগে। যেন আমরা বরফের দেশের বাস করছি।
চা শ্রমিক জামাল, জাহেরুল ও নাসির জানান, সকালে বরফের মতো কনকনে শীত। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এখন বাগানের পরিচর্যা চলছে। শীতের কারণে গাছের ফ্লাইং, কাটিং করতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কী করবো, পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বের হতে হয় আমাদের।
পাথর শ্রমিক ইমরান, আরশেদ আলী ও আবু তাহের জানান, ঠান্ডায় নদীর পানি বরফের মত মনে হয়। তারপরেও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বেড়িয়েছি। কদিন ধরে নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। ক্ষুধার্ত পেটতো ঠান্ডা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিন মজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
নারী পাথর শ্রমিকরা জানান, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর সংসার সামলিয়ে তাদেরকে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে তাদের অনেক সময় কাজে যেতে দেরি হলে মহাজনরা অনেক সময় কাজে নিতে চান না।
বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। অনেক দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম, ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে বেলা করে ক্ষেতে গিয়ে কাজ এগুচ্ছে না বলে জানান তারা।
শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। সকালে স্কুল শিক্ষার্থী তানিয়া, কাজল ও নাইমা খাতুন বলেন, কনকনে শীত। রাতে পড়তে পারি না শীতের কারণে। রাতে যেন তাপমাত্রা জিরোতে চলে আসে। সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেট ও স্কুলে যাওয়াও কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১০ জানুয়ারি এ জেলায় ৬-এর ঘরে তাপমাত্রা হিসেবে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। বিশেষ করে কুয়াশা না থাকলে তাপমাত্রা কমে। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজার শীত বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
এসকে দোয়েল/আরকে