‘স্বপ্নের ঠিকানা’য় কষ্টের শেষ নেই ভূমিহীনদের
২০১৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ৬০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১২টি ব্যারাক (৬০টি ঘর) নির্মাণ করে দেয় সরকার। ভূমিহীনদের কাছে হস্তান্তর করার কয়েকমাস পর ১০টি ব্যারাকের টিনের ছাউনি ঝড়ে উড়ে যায়। ছাউনিহীন খোলা আকাশের নিচে প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতে না পেরে ৫০টি পরিবার ব্যারাক ছাড়ে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে তিনটি পরিবার বসবাস করছে।
এদিকে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে বেহাল দশা হয়েছে ব্যারাকগুলোর। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেগুলো।
ব্যারাকের বসবাসকারীরা বলছেন, সরকার যখন এ ব্যারাকগুলো হস্তান্তর করে তখন আনন্দের সীমা ছিল না। ভূমিহীন পরিবারগুলোর কাছে এ ব্যারাকের প্রত্যেকটি ঘর ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগেনি। হস্তান্তরের মাস দুয়েকের মাথায় ঝড়ে প্রথমে ব্যারাকগুলোর ছাউনি উড়ে যায়। তারপর আর সংস্কার করা হয়নি। ছাউনিহীন ঘরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে না পেরে ৫০টি পরিবার ব্যারাক ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে মাত্র তিনটি পরিবার সেখানে বসবাস করছে।
আরও পড়ুন : কসবায় হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুস্থ ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ২০১৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোপীনাথপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। মাঠের খাস জমির উপর গড়ে তোলা পলেস্তারা দেওয়া ইটের দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দিয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক একটি ব্যারাকে ৫টি করে কক্ষ নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি পরিবারকে একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে অযত্নে-অবহেলা, সংস্কার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির এখন বেহাল দশা। ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানায় তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই। দ্রুত সংস্কার করে আশ্রয়ণটি টিকিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রকল্পে আশ্রিতরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ বছর আগে ঝড়ে প্রকল্পের ১২টি ব্যারাকের মধ্যে ১০টির ছাউনি উড়ে যায়। সংস্কার না করায় ৫০ কক্ষে বসবাস করা পরিবারগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে তিন পরিবার সেখানে বসবাস করে।
আরও পড়ুন : পাবনায় উপহারের ঘর ছেড়ে দিতে হুমকি, ইউএনওর কাছে অভিযোগ
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি ঘরের দেওয়াল ভেঙে গেছে। লোহার পাতের তৈরি ঘরের জানালা ও দরজা এবং বাথরুমের দরজাগুলোর বেশিরভাগই চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া ৬টি টিউবওয়েলের ৫টিই চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। প্রকল্পের প্রবেশমুখে রাস্তাটিরও বেহাল দশা। ছাউনিহীন পরিত্যক্ত ঘরগুলো আগাছায় ছেয়ে গেছে।
প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী নাহিদ দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৫ সালে আমি ও আমার পারিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পাই। আমার মতো মোট ৬০টি পরিবার ৬০টি কক্ষ বরাদ্দ পেয়েছিল। বসবাস শুরু করার কয়েকমাস পরে ঝড়ে প্রকল্পের ৫০টি কক্ষের বা ১০টি ব্যারাকের টিনের ছাউনি উড়ে যায়। মেরামত না করায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসের অনুপযোগী ঘর ছেড়ে সবাই চলে যায়। তারা খুব কষ্ট করেছে। বর্তমানে আমরা তিনটি পরিবার এখানে বসবাস করি।
তিনি আরও বলেন, টিউবওয়েল, দরজা, জানালা, ঘরের চাল চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তার সমস্যা আছে। ১০টি ঘরের ছাউনি আছে। বাকি কক্ষগুলো পরিত্যক্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় আনারুল ইসলাম ও রাকিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব ঘরে লোকজন বসবাস করত। কিন্তু ঝড়ে ঘরের টিনের ছাউনি উড়ে যায়। পরে ৭ বছর পার হয়ে গেলেও ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে না পেরে সবাই আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে গেছে। এখন তিন পরিবার বসবাস করে। ঘরের দরজা, জানালা, টিউবওয়েল চুরি হয়ে গেছে।
আব্দুর রহমান বলেন, আমি ১০ মাস আগে থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছি। এখানে বিদ্যুৎ নেই। ঘরগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জানালা, দরজা, টিউবওয়েল সবকিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে আবাসনটি পরিচালনা না করার জন্য নানা অসুবিধা দিন দিন বাড়ছে।
হাজেরা খাতুন বলেন, সরকার যদি প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করে দেয় তাহলে অসহায় মানুষের জন্য ভালো হবে, সবাই সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী চাঁদ আলী বলেন, অযত্ন অবহেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ধ্বংসের পথে। ঝোপঝাড় আর আগাছায় ছেয়ে গেছে। অনেক ঘরের দেওয়াল ভেঙে গেছে। সবকিছু চুরি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে মালিহাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন বলেন, বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৫০টি কক্ষ। ১০টি কক্ষ বসবাসযোগ্য। সেখানে তিন পরিবার বসবাস করে। সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিছু টিন ও লোহার রড-পাত ইউনিয়ন পরিষদে আছে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে পরিকল্পিত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজু আহমেদ/এসকেডি