কুয়াকাটায় পর্যটকদের হয়রানির যেন শেষ নেই
সাপ্তাহিক কিংবা যেকোনো সরকারি ছুটি উপলক্ষে হাজার হাজার পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী পর্যটক বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে করে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) কুয়াকাটায় ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি আর আজ থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে দূর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক হোটেলে জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন গাড়ি ও খোলা মাঠে অবস্থান করছেন। হঠাৎ করে হোটেল ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা।
১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কিংবা ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের কথা শুনে কুয়াকাটায় পর্যটকরা আসলেও ফিরে যাওয়ার সময় কুয়াকাটার প্রতি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের কাছে হোটেল-মোটেলে বাড়তি ভাড়া আদায় কিংবা নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে অধিক মূল্য আদায় এবং বাসে আসা যাত্রীদের হয়রানি ও মারধর এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। এছাড়াও কুয়াকাটায় অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের মান ভালো না হলেও পর্যটকদের বাড়তি চাপ দেখলেই হোটেলগুলোর রুম ভাড়া তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এসব কারণে ক্ষুব্ধ আগত পর্যটকরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৯০ ভাগ হোটেলের রুম অনলাইনে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এখন আর কোনো রুম খালি নেই। প্রতিবছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যেত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সাপ্তাহিক ছুটিসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকের ভিড় একটু বেশি দেখা যায়।
খুলনা থেকে আগত নাসরীন বেগম বলেন, অনেক যোগাযোগ করেছি তারপরও হোটেলে রুম পাইনি। গতকাল রাত ৩টার সময় কুয়াকাটাতে এসেছি, এখনো ঘোরাফেরা করছি। বিচের সঙ্গে বসার যে বিছানা রয়েছে সেখানে বিশ্রাম নিয়েছি , এখন চলে যাব।
শক্রবার বিকেলে সৈকতে কথা হয় ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা জিন্নাদ আহাদের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই প্রথম কুয়াকাটাতে এসেছি, খুব ভালো লেগেছে। তবে বিচে যখন ঘুরছিলাম মোটরসাইকেল চালকরা অনেক ডিস্টার্ব করেছে, এটা ভালো লাগেনি। তবে কুয়াকাটা আসলেই অনেক সুন্দর।
বরিশালের হিজলা থেকে আগত পর্যটক নাসির আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দূর-দুরান্ত থেকে কুয়াকাটাতে আসি। যখন এখানে পর্যটক বেড়ে যায় তখন হোটেল ও খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া মানসম্মত খাবারও পাওয়া যায় না। নিম্নমানের খাবার বেশি দামে বিক্রি হয়। আমাকে ৩ হাজার টাকার রুম ৫ হাজার টাকায় নিতে হয়েছে।
খুলনা থেকে আগত পর্যটক নাসির উদ্দিন বলেন, আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সবকিছুর দাম বেশি। আগে হোটেল ভাড়া যা ছিল তার থেকে তিনগুণ বেশি নিচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কুমিল্লা থেকে আগত পর্যটক নাঈম ইসলাম বলেন, বিচ-সংলগ্ন যে রেস্তোরাঁগুলো রয়েছে সেগুলোর খাবারের মান খুবই খারাপ। এছাড়া তারা দাম রাখছে অনেক বেশি। ডেকে এনে খাবার টেবিলে বসিয়ে অতিরিক্ত দাম রেখে দিচ্ছে এখানের স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো। প্রথমে খুব সুন্দর ব্যবহার করলেও খাবার শেষে টাকা রাখার জন্য খারাপ আচরণ করেন।
এ বিষয়ে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, আমরা একমাত্র সংগঠন যারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। কুয়াকাটাতে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় ৭৩টি হোটেল যুক্ত রয়েছে। আমাদের নিজস্ব একটি মূল্য তালিকা রয়েছে। এর বাইরে কেউ অতিরিক্ত টাকা নিতে পারে না। আমাদের এই ৭৩টি হোটেলের মধ্যে কেউ যদি অতিরিক্ত টাকায় নেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। তবে কুয়াকাটাতে ১৫০টিরও বেশি হোটেল রয়েছে যারা আমাদের সংগঠনের বাইরে। তারা এই অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন।
মহিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আমি দূর-দূরান্তের পর্যটকদের বলব তারা যদি কুয়াকাটাতে এসে এরকম হয়রানির শিকার হন তাহলে হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশন নামে সংগঠনটিকে যেন জানানো হয়। এছাড়াও আমাদেরকে যদি তারা জানান আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে যে খাবারের রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে সেগুলোতে আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। খোঁজখবর নিয়েছি তারা যেন কেউ অতিরিক্ত টাকা না আদায় করেন। তবে কিছু কিছু হোটেল পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বলে শুনেছি। তবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ পেলে আমরা সে অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মাহমুদ হাসান রায়হান/এমজেইউ