খেলেছি ক্রিকেট, এত জটিল কাজের মধ্যে তো আগে পড়িনি
আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা সাধারণ জনগণদের বলেছেন, আপনারা বলেন এ কাজটা হলো না, ওটা লাগবে, এগুলো করে দেন। আমি বললাম আর হয়ে গেল, ব্যাপারগুলো কিন্তু এমন নয়। এগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোতে বারবার কাজ নিয়ে যেতে হয়, বলতে হয় ভাই আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমে খেলেছি। আমার এলাকার এ কাজটা করে দেন প্লিজ। খেলেছি তো ক্রিকেট, এত ঝামেলা, এত কঠিন প্রক্রিয়া তো জানতাম না। এত জটিল কাজের মধ্যে তো আগে পড়িনি কখনো।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানকে সামনে রেখে দ্বিতীয় পর্যায়ে লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের শালনগর মর্ডান একাডেমি স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
মুন্সী আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চঞ্চলের সঞ্চালনায় ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ অনুষ্ঠানের জনতার প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করেন শালনগর ইউনিয়ন পরিষদ। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের কাছে চিকিৎসা সমস্যা, মাদক প্রতিরোধ, খাল খনন, রাস্তা-ঘাট, বাজার, খেলার মাঠ, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঈদগাহ সংস্কার ও নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেন ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, ছাত্র- শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ। এসময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণের এসব দাবি নোট করেন এবং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন।
শালনগর ইউনিয়নে ৪ বছরের উন্নয়নমুলক কাজের চিত্র তুলে ধরে মাশরাফি বলেন, আপনারা (উপস্থিত জনতা) কি জানেন আমাদের জেলার ক্যাটাগরি কি? আমাদের জেলাটি ‘সি’ ক্যাটাগরির। আমাদের ওপরে ‘বি’ আর তার ওপরে ‘এ’ ক্যাটাগরির জেলাগুলো। উন্নয়ন জন্য বেশি বরাদ্দ হয় ‘এ’, ‘বি’, তারপর ‘সি’। সব খাইয়ে কাটাকুটো যা থাকে তা হলো ‘সি’ ক্যাটাগরির জন্য। আমরা চাইলেই ‘বি’ ক্যাটাগরিতে যেতে পারবো না। ‘বি’ তে যেতে হলে উপজেলা হতে হবে ৫টি। এখন সব ইউনিয়নগুলো ভেঙে নতুন করে ৫টি উপজেলা বানাতে গেলে তো কঠিন বিপদ। আমি রাজি থাকলেও আপনার সব নেতাকর্মীরা তো আর রাজি হবেন না। জেলার উন্নয়নে সবাইকে এক হতে হবে।
তিনি বলেন, অন্যান্য জেলাগুলো আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। তাদের জেলায় যা যা লাগবে তারা সেগুলো এখন পাচ্ছে। আমরা তো এখন পরিকল্পনা করলাম তাহলে কাজ হবে কবে একটু ভেবে দেখবেন। পদ্মা সেতু হবে না, হবে না বলে এখন তো সকাল বিকেল সে সেতুর ওপর দিয়েই যাচ্ছেন আর আসছেন। আপনারা তো বুঝলেন না কিভাবে সেতুটি হলো! কিন্তু আট বছরে যারা করেছে তাদের খবর হয়ে গেছে। কোনো জিনিস হবে না এমন ভাবার সুযোগ নেই। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে একটু দেরিতে হলেও হবে ইনশাআল্লাহ।
আপনারা বলেন ভিজিডি কার্ড, কাবিখা এমপি আসার পর কমিয়ে দিয়েছেন। ভাইজান এমপি কমায়নি। আপনারা নিজেরাই কমিয়েছেন। তথ্য নিতে এসে গল্পের ছলে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছে কয় টাকার চাল খান, আপনি বাড়িয়ে বলছেন ৬০ টাকার চাল খাই, তিব্বত বল সাবান ব্যবহার করে বলছেন লাক্স সাবান ব্যাবহার করি। সব বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছেন। সত্যি বললে ছোট হবেন, ইজ্জত যাবে সেজন্য সব বাড়িয়ে বলেছেন। তথ্যগুলো তারা যখন এক এক করে দেখেছে তখন ধরে নিয়েছে, এরা তিন বেলা ভাত খায়, ভালো ইনকাম, ভালো জীবন যাপন করে। তখন মন্ত্রণালয় থেকে দেখেছে নড়াইলের লোক ভালোই আছে, কার্ড কমিয়ে গরীব জেলাগুলোকে দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করেছেন।
মাশরাফি আরো বলেন, আপনাদের জন্য কে কাজ করছে তা আপনাদেরই দেখা উচিত। যে কাজ করছে সে চেষ্টা করছে কি না? আপনাদের নিজেদের সব তথ্য জানা উচিত, সব কাজ বুঝে নেওয়া উচিত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে আমি থাকি বা না থাকি আমাদের নড়াইলের উন্নয়ন হবেই। একটা কথা আপনারা সবাই মনে রাখবেন, ওপরে আল্লাহ আর নিচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি সব উন্নয়ন করছেন। নড়াইলের এমপি তো তিনি। আমি কিন্তু তার কর্মী ছাড়া আর কিছুই নই। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন যে, যাও নড়াইলে আমার (প্রধানমন্ত্রী) হয়ে কাজগুলো করে দাও।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আ. হান্নান রুনু, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সজিব রহমান/এফকে