নেপালের তরুণী এখন লক্ষ্মীপুরের বধূ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় একের পর এক বিদেশি তরুণীদের আগমন ঘটছে। তবে বেড়াতে নয়, বধূ হয়েই এসেছেন তারা। চলতি বছরেই তিন জন বিদেশি তরুণী রায়পুরের বধূ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন। সর্বশেষ নেপালের বাসিন্দা জ্যোতি (২১) নামে এক তরুণী প্রেমের টানে রায়পুরে ছুটে এসেছেন। রায়পুর পৌরসভার কাঞ্চনপুর এলাকার সাইপ্রাস প্রবাসী রাসেল হোসেনের ঘরকে আলোকিত করেছেন তিনি। চাকরির সুবাধে সাইপ্রাসে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে এসে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
রাসেলকে বিয়ে করতে নেপাল থেকে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জ্যোতি। তিনি নিজের নাম জ্যোতি থেকে পাল্টে রেখেছেন খাদিজা বেগম। তিনি নেপালের সোনাচুড়ি জেলার হেটড়া শহরের বাসিন্দা। সাইপ্রাসে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি।
আরও পড়ুন : ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে করতে গাজীপুরে ছুটে এলেন মার্কিন তরুণী
রাসেল রায়পুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চনপুর এলাকার মনতাজুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে ও সাইপ্রাস প্রবাসী। সাইপ্রাসেই জ্যোতির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রাসেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্যোতি ও রাসেল সাইপ্রাসে চাকরি করতেন। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়। দীর্ঘদিনের পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তারা। এরপর দুজনই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন। প্রায় দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে তারা নিজ দেশ নেপাল ও বাংলাদেশে চলে আসেন। ২৩ নভেম্বর জ্যোতি নেপাল থেকে বাংলাদেশে আসেন। রাসেল নিজেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। ঢাকাতেই জ্যোতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। জ্যোতি নাম পরিবর্তন করে আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে নিজের নাম খাদিজা বেগম রাখেন। এরপর তারা ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিছু দিন তারা ঢাকায় ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাঘুরি শেষে ২০ ডিসেম্বর নববধূকে নিয়ে রাসেল গ্রামের বাড়ি রায়পুরে আসেন।
আরও পড়ুন : প্রেমের টানে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বিয়ে করলেন ইতালির যুবক
তবে ঢাকায় বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমক না হওয়ায় বাড়িতে স্বজনরা নতুন করে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেন। ২৬ ডিসেম্বর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা করে রাসেল-খাদিজার বিয়েকে স্মরণীয় করেন স্বজনরা। এদিকে প্রতিদিনই নববধূকে দেখতে আশপাশের এলাকার মানুষজন ছুটছেন রাসেলের বাড়িতে।
রাসেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঙালি নারীদের মতোই খাদিজা চলাফেরা করার চেষ্টা করছেন। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তিনি গৃহস্থলি কাজকর্মে সহযোগিতাও করছেন। বাঙালি পোশাক ও পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এতে কোনো সমস্যাও হচ্ছে না তার। ছেলে বউকে নিয়ে রাসেলের বাবা-মা দুজনই খুব খুশি। তাদের আনন্দকেই বড় করে দেখছেন মা-বাবা ও স্বজনরা। বিয়ের আগেই রাসেল তার মাকে খাদিজার সম্পর্কে বলে। এতে তার মা নিজেই খাদিজাকে পুত্রবধূ করে আনতে অনুমতি দেন। খাদিজা এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছেন। রাসেল ও খাদিজার সংসার যেন সুখে-শান্তিতে ভরে উঠে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ছেন পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন : এবার মালয়েশিয়ার তরুণী কুমিল্লায়
এ ব্যাপারে খাদিজা বেগম (জ্যোতি) জানান, পরিবারের সম্মতি নিয়েই নেপাল থেকে তিনি রাসেলের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চলে এসেছেন। রাসেলকে তিনি অনেক বেশি ভালোবাসেন। বাকি জীবন রাসেলের সঙ্গেই কাটাতে চান। রাসেলের পরিবারকেও নিজের পরিবারের মতোই তিনি ভালোবাসেন। ঢাকায় তিনি কিছু দিন ছিলেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও গ্রামীণ পরিবেশ তিনি উপভোগ করেছেন। তার কাছে এ দেশের সংস্কৃতি ও পরিবেশ ভালো লেগেছে।
জানতে চাইলে রাসেল হোসেন বলেন, চাকরির সুবাধে প্রেমের সম্পর্কটি বিয়ের মাধ্যমে দৃঢ় হয়েছে। খাদিজাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আজীবন তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকবো। আমার পরিবারও তাকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। খাদিজা মোটামুটি বাংলা বলতে পারে। ভাষাগত সমস্যা হয় না তার।
আরও পড়ুন : ভালোবাসার টানে নোয়াখালীতে মিসরের তরুণী
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৮ মার্চ প্রেমের টানে একই উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদের কাছে ছুটে আসেন ইন্দোনেশিয়ান তরুণী ফানিয়া আইঅপ্রেনিয়া। ফেসবুকের মাধ্যমে গড়ে ওঠা তাদের সম্পর্কটি বিয়ে পর্যন্ত রুপ নিয়েছে। এর ৭ মাসের মাথায় ৮ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ান আরও এক তরুণী সিতি রাহাইউ উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের উত্তর কেরোয়া গ্রামের মামুন হোসেনের কাছে ছুটে আসেন। মালয়েশিয়ায় চাকরির সুবাধে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা লক্ষ্মীপুর আদালতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর