দেড় লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিক্রি করলেন আ.লীগ নেতা!
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের সাতপাকিয়া পুকুরপাড় এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে এই ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত সেলিম রেজা খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোকসা উপজেলার ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘরের বরাদ্দ পান হারুন অর রশিদ (৭৫)। তবে আইন লঙ্ঘন করে সেই ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে মন্টু ব্যাপারীর কাছে। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘরটি কিনে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মন্টু ব্যাপারী। আর হারুন অর রশিদ থাকেন ওই ঘরের বারান্দায়। সেলিম রেজা দেড় লাখ টাকায় ঘরটি বিক্রি করেছেন মন্টু ব্যাপারীর কাছে। মন্টু ব্যাপারী ও হারুন অর রশিদ উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাতপাকিয়া গ্রামে ১৩টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে একটি ঘরের বরাদ্দ পান হারুন অর রশিদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ঘরের চাবি দেওয়া হয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। হারুন অর রশিদ বারান্দার এক কোনায় কাপড় ও টিন দিয়ে ঘেরা মেঝেতে বসে আছেন। ভয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
তবে হারুন অর রশিদের মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে আমার বাবার বরাদ্দকৃত ঘরে মন্টু ব্যাপারী থাকেন। আমার বাবার ঘর বাবাকে দেওয়া হোক। ঘরের বারান্দায় খুব কষ্ট করে বাবা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরটি বুঝে পেলেই আমরা খুশি।
এ বিষয়ে মন্টু ব্যাপারীর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন বলেন, খোকসার ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজার মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গত ২৪ এপ্রিল ঘরটি কিনেছি। আমার কাছে ৩০০ টাকার লিখিত স্ট্যাম্প রয়েছে। হারুন অর রশিদ বৃদ্ধ মানুষ। তাই ঘরের বারান্দায় থাকার জায়গা দিয়েছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিক্রি করা মানে প্রধানমন্ত্রীকে বিক্রি করা। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দলের সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে খোকসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত তদন্ত করে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রতিবেদন দেবেন। অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই ওই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। সরকারি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ।
রাজু আহমেদ/এমজেইউ