বরিশাল বিভাগে বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা
আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা পরে পহেলা জানুয়ারি। সরকার ঘোষিত বই উৎসবের দিন। কিন্তু বরিশাল বিভাগে চাহিদার অনুযায়ী বই এসে পৌঁছায়নি। যে সংখ্যক বই পৌঁছেছে তা সকল শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মাঝে। এমনকি বিভাগীয় শিক্ষা অফিসে ৬ জেলার ৪২ উপজেলায় মোট শিক্ষার্থী এবং তার অনুকূলে কত সংখ্যক বইয়ের চাহিদা রয়েছে তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য জমা হয়নি।
শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করে কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরও অর্থ বরাদ্দ না বাড়ানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত যে বই এসেছে সেগুলোর মানও নিম্নমানের।
বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক ভূঞা বলেন, উপজেলায় মাদরাসা, ইবতেদায়ী, মাধ্যমিক এবং প্রাথমিকে মোট চাহিদা ১ লাখ ১৯ হাজার ৩১৭টি। তবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বই পেয়েছি ৫০ হাজার ১৩৮ টি। এর মধ্যে চতুর্থ, পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির একটি বইও আসেনি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আংশিক বই এসেছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম পর্যন্ত ৩টি বিষয়ের বই আসা বাকি রয়েছে। মাদরাসার ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির কোনো বই এখনো পৌঁছায়নি।
শুধু বরগুনা সদর উপজেলা নয়, ভোলার তজুমদ্দিন, পটুয়াখালীর গলাচিপা, দুমকি, ঝালকাঠির রাজাপুর, কাঁঠালিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসেও কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ সকল উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারাও অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন।
পিরোজপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইদ্রিস আলী বলেন, এখনো বই আসছে প্রতিদিন। কত সংখ্যক বই পেয়েছি তা ৩১ ডিসেম্বরের আগে বলা যাচ্ছে না। বছরের শেষ দিন পর্যন্ত যদি চাহিদার অনুকূলে বই না পৌঁছে তখন হয়তো শঙ্কার কথা বলা যাবে। তবে বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর বই আসতে দেরি করছে।
একই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, আসন্ন বই উৎসবকে উপলক্ষ করে এখন পর্যন্ত যে বই এসেছে সেই বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া বিগত বছরে ২৫ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চাহিদার অনুকূলে ৭০/৮০ শতাংশ বই এসে যেত। কিন্তু এবছর ২৫ থেকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে বই আসতে শুরু করেছে। যে গতিতে এবং সংখ্যায় বই আসছে তাতে বই উৎসবের দিন জেলার শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে শতভাগ বই তুলে দেওয়া অসম্ভব।
কুমারেশ চন্দ্র গাছি আরও বলেন, জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪টি উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই এসেছে। বাকি দুটিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই এসছে। আমার ধারণা কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ বই ছাপানোয় সে অনুসারে বরাদ্দ না থাকায় এমন সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষে মোট চাহিদা ১৩ লাখ ২১ হাজার ২০টি বই। এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮০০টি, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৮৮ হাজার ৮৪৮টি, উজিরপুরে ১ লাখ ৩ হাজার ৫১২টি, গৌরনদীতে ৮৬ হাজার ৭০০টি, বাকেরগঞ্জে ১ লাখ ৮১ হাজার ১৪০টি, বানারীপাড়ায় ৮৫ হাজার ২০টি, বাবুগঞ্জে ৬৭ হাজার ৮০০টি, মুলাদীতে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৫০টি, মেহেন্দীগঞ্জ ২ লাখ ১০ হাজার ৬০০টি এবং হিজলায় ৯৪ হাজার ৩৫০টি নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম জানান, প্রাক-প্রাথমিকের সব নতুন বই পৌঁছেছে। চলতি সপ্তাহে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বই পৌঁছতে পারে। তবে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি কোনো বই এখনো পৌঁছেনি।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, উপজেলায় দুই লাখের বেশি বইয়ের চাহিদা। এখন পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির দুই বিষয়ে বই এসেছে। অন্য শ্রেণির বই এখনো আসেনি।
উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ থাকা সত্যেও আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বরিশাল বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং প্রাথমিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকদের। বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপ পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের কার্যালয় এবং মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে প্রাথমিক শিক্ষা বরিশালের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মিজ নিলুফার ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে দুটি কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, প্রাথমিকে ১১ লাখ শিক্ষার্থীর অনুকূলে ৫০ লাখের বেশি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখনো ৫০ লাখ বই এসে পৌঁছেনি। তিনদিনে সম্পূর্ণ বই এসে পৌঁছানো অসম্ভব। ওদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বিভাগীয় অফিস থেকে জানানো হয়েছে, বিভাগের ৬টি জেলার মধ্যে বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা জেলার চাহিদাপত্র তারা পেয়েছেন। ঝালকঠি এবং পটুয়াখালী জেলার চাহিদাপত্র এখনো পায়নি। ফলে কত লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
এই অফিসের কর্মকর্তারাও মনে করেন, নতুন বছরে বই উৎসব হলেও বিগত বছরের প্রথম দিনে সকল শিক্ষার্থী সকল বিষয়ের বই হাতে পেলেও এবার তা মোটেই সম্ভব নয়।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে