পর্যটকে ঠাসা কক্সবাজার, খাবারের বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ
বালুকাময় সৈকতে যত দূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। যেন কোথাও তিল ধারণের একটু ঠাঁই নেই। টানা তিন দিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের চিত্র এটি। পর্যটকদের যেন কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয় সেজন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াশা মাখা শীতল হাওয়ায় সূর্যোদয় দেখতে সৈকতের বালিয়াড়িতে পর্যটকদের ভিড়। শুধু সৈকতে নয়, ভিড় রয়েছে হোটেল-মোটেল, এলাকার অলিগলিতেও। কোথাও তিল ধারণের একটু জায়গা নেই।
নগরীর বাইপাস সড়ক, ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবালসহ সবখানেই তীব্র যানজট দেখা গেছে। যানবাহনের সঙ্গে লোকজটও রয়েছে। বড় বাসগুলো টার্মিনাল এলাকায় থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন এলাকা ও শহরে ঢোকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
সৈকত ছাড়াও জেলার প্রায় সব পর্যটন স্পটে হাজারো পর্যটকের উপস্থিতি রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বিপুল পর্যটকের সমাগম রয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, রাখাইন পল্লী, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ মন্দিরেও পর্যটকদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক তানিম আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে প্রথমবার এসেছি। আগে ইউটিউব ও ফেসবুকে সমুদ্র দেখতাম। এখন বাস্তবে দেখে বিশ্বাস করতে পারছি না আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর।
কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক হুমায়ূন কবির বলেন, পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সকাল থেকে রুম খুঁজে পাইনি। তাই আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। এত যে মানুষ হবে কল্পনাও করেনি। তবে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
পাবনা থেকে আসা পর্যটক সাবিনা আক্তার বলেন, শুক্রবার কক্সবাজার এসেছি। আসার পর থেকে খাবার থেকে শুরু করে যেভাবে দাম আদায় করছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক বাটি গরুর মাংসের দাম রেখেছে ৬০০ টাকা।
এদিকে পর্যটকের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা। ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ৫ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এ সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাবিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হোটেলে বর্তমানে ২০০ ওপরে বিদেশি পর্যটক রয়েছে। কোনো রুম খালি নেই। আগামী ২ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, তিন দিনে ৩ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছে। খাবার দাম থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। যেসব পর্যটক আমাদের অভিযোগ করছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জরিমানা করছি।
সমুদ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী ইউছুফ বলেন, পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা ৩০ জনের মতো কাজ করছি। কিন্তু পর্যটক এসেছে ৫ লাখের বেশি। তাই সমুদ্রে গোসল করতে নামা পর্যটকদের জন্য ৩টি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে গিয়েও তারা গোসল করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের কোনো কমতি নেই। কক্সবাজারে ১১টি পর্যটক স্পটে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য আছে। আমার সব সময়ই সজাগ আছি।
সাইদুল ফরহাদ/এসপি