মৌলভীবাজারে পর্যটকের ঢল, বাড়তি ভাড়াতেও মিলছে না রুম
টানা ৩ দিনের ছুটিতে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। শ্রীমঙ্গলের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো হাউজফুল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে সকাল থেকেই পর্যটকদের লম্বা সারি দেখা গেছে।
জানা যায়, আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কোনো রুম খালি নেই। ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই বুক হয়ে গেছে প্রায় প্রতিটি রুম। এ অবস্থায় পর্যটকদের আগে থেকে রুম বুকিং দেওয়া না থাকলে বেড়াতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রীমঙ্গলের ৭০টি হোটেল ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সব রুম অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছে। শ্রীমঙ্গলের ৫ তারকা হোটেলসহ সাধারণ মানের হোটেলগুলোতেও কোথাও কোনো রুম খালি নেই।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা বলছে, হোটেল-মোটেলগুলো আগে থেকেই শতভাগ বুক হয়ে গেছে। পূর্ব পরিচিতজনরা নানাভাবে ফোন দিয়ে রুম বুকিংয়ের চেষ্টা করছেন কিন্তু আমরা পারছি না। শেষ সময়ে এসে অনেকেই কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রুম নিতে আগ্রহী হলেও দেওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যটকরা প্রতিদিনই রুমের জন্য কল দিচ্ছেন। তারা অতিরিক্ত টাকা দিতেও রাজি কিন্তু কোনো উপায় নেই।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মামুন আহমেদ বলেন, আমরা অনেক আগে এ বন দেখার জন্য এসেছিলাম। শীত আসছে তাই পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে এখন আবার আসলাম তাদের মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য। এখানে আসলে অনেক কিছু দেখা বা জানা যায়। আগে থেকে রুম বুকিং ছিল জন্য রক্ষা না হলে এখানে হোটেল ক্রাইসিস চলছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ট্যুর গাইড মো. আহাদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পর্যটকরা আসেন, আমরা তাদের নিয়ে ভেতরটা ঘুড়ে বেড়াই। এ বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৬ প্রজাতির বানর আছে। এগুলো দেখতে হলে ভোর বেলা বা বিকেলের দিকে আসতে হবে।
এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের এমডি সজল দাশ বলেন, কোথাও সিট খালি নেই, কেউ আসলে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। এমনটা সাধারণত ঈদের ছুটিতে হয় কিন্তু এবার ৩ দিনের ছুটি এক সঙ্গে পাওয়ায় মানুষ ঈদের মতই বড় ছুটি পেয়েছে যার কারণে সব রুম বুকড। এবার রেকর্ড পর্যটক এসেছে বলেই আমার ধারণা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, শীত আসলেই পর্যটকের আগমন ঘটে মৌলভীবাজারে। ডিসেম্বর মাস আসলেই পর্যটন এলাকা দেখার জন্য সবার পছন্দের স্থান থাকে মৌলভীবাজার। যা অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি। কারণ এ জেলায় রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি পর্যটন স্পট। শীতে এসব স্পটগুলো ঘুরে দেখেন পর্যটকরা। তাছাড়া এই স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান’। এই ডিসেম্বর মাসের ১লা ডিসেম্বর হতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটক ৮ হাজার ৭শ জন, ছাত্র পর্যটক ৩ হাজার ১শ ৮৬ জন তাছাড়া বিভিন্ন বিদেশী পর্যটক ৬৮ জন প্রবেশ করেছে। এই ২২ দিনে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৪শ ২৪ টাকা। তবে অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে পর্যটকরা বেশি আসছে। তিনি আরও বলেন, এখন শীত প্রায় শেষের দিকে পর্যটকরা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক জানান, কোনো কটেজ খালি নেই। গত এক সপ্তাহ থেকে শত শত ফোন রিসিভ করে একই কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠছি। মাফ চেয়েছি, আমার নিজেরও একটি ইকো রিসোর্ট রয়েছে। এটিও প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই ফিলআপ হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসের রিকবদার বলেন, এই ছুটিতে অনেক পর্যটক আসবেন সেই ধারণা থেকে আমাদের আলাদা প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে তাদের সাথে সমন্বয় করে পর্যটকরা যেন নিরাপদে ঘুরতে পারেন সে জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে আমরা সতর্ক।
ওমর ফারুক নাঈম/আরকে