‘যে দলই করি না কেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’
রংপুরে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টা এক মিনিটের পর থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মধ্য দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় পার্টি, বিএনপি, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, এনপিপি, জাসদ (ছাত্রলীগ), ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।
রাত ১২টা এক মিনিটে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু ও সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক। এরপর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য গর্বের দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বাঙালির দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আমি তাদেরসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার-পরিজন এখনো যারা বেঁচে আছে তাদের পাশে আমাদের থাকা উচিত। আমি বিগত পাঁচ বছরে মেয়র থাকাকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামে রংপুরের প্রথম শহীদ কিশোর শংকু সমজদারের অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছি, তাকে মাসে মাসে ভাতা দিয়েছি। শুধু শংকু সমজদারের পরিবারকেই নয়। আমি ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ভাতা প্রদান করেছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর রংপুর শিরোনামে তথ্যবহুল একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছি। আমরা যে দলই করি না কেন আমাদের জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এ সময় পুনরায় নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করাসহ রংপুর মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলার চোখ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানবীর হোসেন আশরাফী বলেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। আমরা শহীদ বেদিতে ফুল দেয়ার সময় শপথ করেছি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আবারো বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যদি রঞ্জিত করতে হয়, আমরা তাই করব। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা আমরা ধ্বংস হতে দেব না, নৎস্যা হতে দেব না।
সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ফুল দিতে আসা সঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠক মাহমুদা আক্তার মিতু বলেন, আমি আমার সন্তানকে শহীদ মিনারে নিয়ে এসেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারে, সেটার জন্য আমাদের অভিভাবকদের আগে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা নারীরাসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ যেন সুন্দর সার্বভৌম রাষ্ট্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, বিজয়ের এই দিনে এটাই প্রত্যাশা করছি।
এদিকে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলনসহ রিপোটার্স ক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটি, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, রোটারি ক্লাব, বাংলার চোখ, ছকিনা ফাউন্ডেশন, বন্ধুজন ছাড়াও রংপুরের বিভিন্নস্থানে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে