বিজয় দিবসে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা ঝিনাইদহের চাষিদের
মহান বিজয় দিবস আগামীকাল শুক্রবার। বাঙালি জাতির গর্বের দিন। দীর্ঘ নির্যাতন-বঞ্চনা থেকে মুক্তির দিন। দিবসটি উপলক্ষে জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে দেশবাসী। দিবসটিকে ঘিরে বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। তাই বিজয় দিবসের ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা। চলছে ফুল চাষিদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিবসটি উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে সারা বছরের লাভ লোকসানের হিসাব কষবেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ফুল বিপণন কেন্দ্রে হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও ফুল চাষিরা। গাড়িতে করে ফুল আনতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা দরে। আর গ্রামে গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুল ও ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। রঙ-বেরঙের ফুলে মাঠগুলো সেজেছে নতুন সাজে। ফুলের কড়ি ধরে রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে বাগানগুলোতে চলছে পরিচর্যার কাজ। গ্রামের নারীরা গাঁদা ফুল তুলতে ব্যস্ত। কমলা-হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে মতে, মহান বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে ঝিনাইদহের ফুল। দাম ভালো পেলে গত বছরের মতো এবারও চাষিরা লাভের মুখ দেখবেন। গাঁদা ফুলের ঝুপা কয়েক দিন আগেও ছিল ৫০-৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়বে।
আরও জানা যায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত হয় গাঁদা ফুল। বিজয় দিবসকে ঘিরে লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন জেলার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ফুল চাষি। এবারে শুধু বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করেন কৃষকরা।
গান্না এলাকার ফুল চাষী মো. মারুফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বছর ফুল চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। এ বছর ফুলের বাজার অনেক কম। তবে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো বাজার পাবেন বলে আশা করছেন। কিছু বিশেষ দিনে ফুলের বাজার বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হবে। গত বছর যেখানে গাঁদা ফুল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ঝুপা বিক্রি করেছেন, সেখানে বর্তমান বাজার চলছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ঝুপা। এছাড়ও চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি করা হচ্ছে ১ থেকে দেড় টাকা করে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই পরিবহন ধর্মঘট, সম্মেলন, অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফুলগুলো বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তারপরও কিছুটা লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি।
গান্না বাজার ফুল বিপণন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বছর ফুলের বাজার ভালো দেখে এ বছর নতুন করে অনেক চাষি ফুল চাষ করছেন। এতে করে ফুলের উৎপাদন বেড়েছে, সেই তুলনায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের বাজার একটু কম। তবে তাদের উৎপাদিত ফুল দেশের চাহিদা মিটিয়ে যদি বিদেশে পাঠানোর সুযোগ থাকতো তাহলে ফুলের বাজারটা অনেক ভালো পাওয়া যেত। আবার তাদের ফুল বিপণন কেন্দ্রে যদি ফুল সংরক্ষণ কেন্দ্র থাকতো তাহলে দাম কমের সময় সেখানে ফুলগুলো রাখার পর দাম বাড়লে বিক্রি করতে পারতেন।
ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষি সমিতির সভাপতি জামির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় বিভিন্ন ফুল বিপণন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত সিজনে ১৬ ডিসেম্বর ১৫০ কোটি টাকার টার্গেট ছিল। সেখানে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর শুধু ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার টার্গেট রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবারা ও গোলাপ ফুল বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে বাসন্তী কালারের গাঁদা ফুল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লাল গাঁদা এক ঝুপা ১৩০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে। চন্দ্রমল্লিকা ১ টাকা ৮০ পয়সা, জারবারা ৬-৭ টাকা, গোলাপ ৪-৫ টাকা করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন ফসলের পাশাপশি এখানে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে সব থেকে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয়ে থাকে ঝিনাইদহে। কৃষকদের ফুল বিক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে জেলাতে বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুল বিপণন কেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রথম সিজনে জেলার ৬ উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা অনুযায়ী যে ফুল লাগবে, সেখানে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে পুরো সিজনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলের যে চাহিদা আসছে, সেগুলো যদি পূরণ করা হয় তাহলে বিক্রি ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ফলন ভালো পেতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর