নোবিপ্রবির ১৪ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবিতে অবরোধ
বিভিন্ন অপরাধের দায়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ১৪ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সোনাপুর-চর জব্বর সড়ক অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার নার্গিস আক্তার হেলালী স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সভার সিদ্ধান্তক্রমে এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের শিক্ষার্থীদের সংঘটিত বিশৃঙ্খলা এবং মারামারির দায়ে এক শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আরেক শিক্ষার্থীকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার এবং বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অপর এক শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই অভিযোগে আরেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেজন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং দুই শিক্ষার্থীকে সতর্কীকরণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন থেকে রড সরানোর দায়ে এক শিক্ষার্থীকে দুই বছরের বহিষ্কারসহ স্থায়ীভাবে হলের সিট বাতিল করা হয়। নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর ইসলামিয়া সড়কে মারধরের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে নয় শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্ট টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে নোটিশ জারি করার পর বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রতিবাদে ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেল চারটার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সব ফটক তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। খবর পেয়ে ছুটে যান প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুরসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। তবে তারা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনের সোনাপুর-চর জব্বর সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।
বহিষ্কারাদেশের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি শাস্তি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছি।
মাহমুদুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শাস্তির প্রত্যাহার চাই। শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে দুই দল ছাত্রের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। সমাধানের জন্য আলোচনা অব্যাহত আছে।
হাসিব আল আমিন/এফকে