বগুড়ায় আদালতের জব্দ করা ১১৩০ বস্তা চাল উধাও
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে জব্দকৃত ১১৩০ বস্তা সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উধাও হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, রাতের আঁধারে সরিয়ে ফেলা হয়েছে জব্দ হওয়া চালগুলো। দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিলে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নিচে ফাঁকা দেখা যায়। এর আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখা যেত সরকারি ওই চালের বস্তা। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে সিলগালা গুদাম থেকে চাল উধাওয়ের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু এমন খবরে অনেকটা নির্বিকার সিলগালা গুদামের দায়িত্বে থাকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা। তার দাবি, সিলগালা থাকায় ভেতরে কোনো খোঁজই নেননি তিনি। সোমবার সকালে জব্দ করে রাখা ১১৩০ বস্তা চালের উধাও হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ৩০ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার কালিতলা বাগবেড় এলাকায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক যুবলীগ নেতার গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুদকৃত ১১৩০ বস্তা চাল উদ্ধার করে। পরে সেখানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও গুদাম সিলগালা করে রাখে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গুদাম মালিক বাগবেড় এলাকার শাজাহান আলীর ছেলে শাহাদত হোসেন। তিনি ধান-চালের ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগবেড় এলাকায় শাহাদৎ হোসেন একটি ভবন নির্মাণ করছেন। নির্মাণাধীন ভবনটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। এই ভবনের নিচতলায় চালের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। এখানেই ১১৩০ বস্তা সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল মজুদ রাখা ছিল। প্রতি বস্তার ওজন ৩০ কেজি। আদালতে অভিযানের পর থেকে এই গুদামে ওই ১১৩০ বস্তা চাল সিলগালা করা ছিল।
সিলগালা করে রাখা এই ভবনের নিচতলা থেকে রাতের আঁধারে জব্দ হওয়া ১১৩০ বস্তা চাল সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই বিষয়ে সুর্নিদিষ্ট কোনো তথ্য কেউ দিতে পারছেন না।
সরেজমিনেও টিনের ঘেরা ওই নির্মাণাধীন ভবনের দুটি শ্যালো মেশিনচালিত ভটভটি নজরে পড়ে। কিন্তু ভটভটিতে কোনো চালের বস্তা নেই। গত ৩০ নভেম্বর চালগুলো জব্দ করে এই ভটভটির ওপরই রাখা হয়েছিল। এমন ছবিও ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। সোমবার ওই ভটভটির আশেপাশেও সরকারি সিল দেওয়া চালের বস্তাও দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন বাসিন্দা বলেন, অভিযানে সিলগালা করার পরের দিনেই চালগুলো সরানো হয়েছে। ১ ডিসেম্বর গভীর রাতে টিনের বেড়া খুলে ভেতরে একটি ট্রাক ঢোকানো হয়। সেই ট্রাকে সবগুলো চাল উঠিয়ে অন্যস্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে ভবনের মালিক।
এ বিষয়ে গুদামের মালিক শাহাদত হোসেন বলেন, আমার বাড়ি ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে রেখেছে। এরপর ওখানকার আর কিছু আমি জানি না। ওটা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানবে।
উপজেলার কালিতলা বাগবেড় এলাকায় ৩০ নভেম্বরে চলা ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, অভিযানে ওই গুদামে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় ও বিতরণযোগ্য সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ভি.ডব্লিও.বি এবং পুষ্টি চাল) জন্য বরাদ্দ ১১৩০ বস্তা পাওয়া যায়। গুদামের মালিক রক্ষিত চালের বস্তার কোনোরূপ ক্রয় বা বিক্রয় রশিদও দেখাতে পারেননি। এমনকি চালের বস্তার উৎস সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে পারেননি। এজন্য সেখানে উপস্থিত থাকা শাহাদতের ভাই শাহিন আলমকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর চালসহ গুদামটি সিলগালা করে আদালত।
ওই আদালতের বিচারক ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাযালয়ের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইম জানান, সিল খোলার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কেউ যোগাযোগ করেননি। এর আগে পর্যন্ত গুদামটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবে। আর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে পুলিশ। এতে কোনো সমস্যা হলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আদালত থেকে এমন নির্দেশ তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চাল উধাওয়ের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান সিলগালা গুদামের দায়িত্বে থাকা সারিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযানের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই গুদাম সিলগালা করেছেন। সেখানে আমাদের তো যাওয়া সম্ভব নয়। আর আমার কাছে তো চাবিও নেই।
সারিয়াকান্দি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী জানান, সিলগালা করার পর গুদামের বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু গুদামে থাকা চাল সরানো সংক্রান্ত কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই। আমি আপনার কাছ থেকেই এই খবর পেলাম।
আলমগীর হোসেন/এমএএস