আশ্রয়ণের এক ঘরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৯ সদস্যের মানবেতর জীবন
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মুসলিমনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শাহজাহান আলীর সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম (৬৫)। স্বামীকে হারিয়েছেন ২৫ বছর আগে। তারপর থেকে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে একাই সংসার সামলাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মনোয়ারা বেগম তার পরিবার নিয়ে সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুণাগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে বসবাস করেন। তিন সন্তান আর পাঁচ নাতি-নাতনিসহ এখন তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়িয়েছে৷
জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়েছে মনোয়ারা বেগমকে। তিন সন্তান বড় হওয়ার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী। পুরো পরিবারের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে কোনোমতে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে চার বছর যেতে না যেতেই বড় মেয়ের স্বামীও মারা যায়। মেয়ে আর নাতি চলে আসে আবার তার কাছে৷ ঋণের টাকায় ছেলেকে কিনে দিয়েছেন অটোরিকশা। আর ছোট মেয়ের বিয়ে হলেও তাকে মেনে নেয়নি শ্বশুর বাড়ির পরিবার৷ তিন সন্তান আর পাঁচ নাতি-নাতনিসহ এখন তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে কোনোমত বসবাস করছেন তারা।
তার বড় মেয়ে শামসুন্নাহার বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমাদের ঘরবাড়ি ছিল না। অনেক কষ্ট করে আমরা বড় হয়েছি। একটা সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের জায়গা হয় না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকি। অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করি। আমি নিজেও অনেকবার ভূমি অফিসে গিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করতে চাই সরকার যাতে আমার মাকে একটা বীর নিবাস দেয়।
ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, আমি ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেছি। অনেক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছি অথচ হয়নি। আমাদের অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়। যদি একটা চাকরি পেতাম তাহলে কষ্ট কিছুটা হলেও কমতো।
মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামীর বাসা ছিল ময়মনসিংহ। এদিকে যুদ্ধের সময় চলে আসি। বিয়ের পর তিনি আমাকে বলেন, তার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট আছে। তারপর আমরা সেটা সংগ্রহ করি। কয়েক বছর পর তিনি মারা যান। পরে অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছি। যা ভাতা পাই তা ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা বীর নিবাস পেলও আমরা পাইনি। একটা ঘরে ৯ জন সদস্য নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। একটা সরকারি ঘর পাইছি তাও আবার গ্রামে। এখানে এতজন আমরা থাকতে পারি না। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ভালো একটি ঘর দেওয়া হয়। যেখানে আমার পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারব। তাহলে মরেও শান্তি পাব।
ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বীর নিবাস সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। যাদের জমি নেই তারা যদি খাস জমির জন্য ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তাহলে এটি সমাধান হবে বলে আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের শামসুজ্জামান বলেন, বীর নিবাসের প্রথম শর্ত হলো চার শতক জমি থাকতে হবে। নিজস্ব জমি না থাকলে এখন পর্যন্ত ঘর দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যদি উনার মেয়ে বিধবা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আবেদন করলে আমরা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য বিবেচনা করব। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনোভাবে তারা জমি কিনে বীর নিবাসটি নিতে পারেন। তারপরেও আমাদের উপজেলা প্রশাসন তাদের সহায়তার চেষ্টা করছি।
এম এ সামাদ/আরকে