ছেছমা পিঠা বিক্রি করে সংসারে অর্থের যোগান দিচ্ছেন মারমা নারীরা

খাগড়াছড়ির অলি-গলিতে হরেক রকম পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। নারীরা সংসারের কাজ শেষ করে বিকেলে গরম গরম পিঠা বিক্রি করছেন। এতে লাভ হচ্ছে ভালোই। এ টাকা তারা সংসারে যোগান দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বিকেল ৩টার পর নারীরা পিঠা বানানোর সরঞ্জাম নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্য বেরিয়ে পড়েন। প্রত্যেকে তার জায়গায় বসে শুরু করেন হরেক রকম পিঠা তৈরি। একইসঙ্গে চলে পিঠা বিক্রি।
পাহাড়ি নারীরা যেসব পিঠা বানায় তার মধ্যে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ছেছমা। এই পিঠা মূলত মারমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পিঠা। তবে এখন সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই এই পিঠার বিশেষ কদর বেড়েছে। খাগড়াছড়ির নির্দিষ্ট কোনো দোকানে এই পিঠা তৈরি না হলেও শীত মৌসুমে রাস্তার ধারে মারমাদের এই পিঠা দেখা যায়। তারা খুব কম দামে এই পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিটি ছেছমা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
ছেছমা পিঠা তৈরির মূল উপকরণ বিন্নি চালের গুঁড়ো। বিন্নি চালের গুঁড়ো ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হয়। তারপর তেলে প্রলেপ দেওয়া স্টিলের কড়াইয়ে পরিমাণমতো চালের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে কিছু সময় ঢেকে রাখতে হয়। দেখা যাবে শক্ত ও জালের মতো হয়েছে। পরে তা নামিয়ে নারিকেল ও গুড় মিশ্রিত উপকরণ দিয়ে পাটিসাপটার মতো মুড়িয়ে দিলেই হয়ে গেল ছেছমা পিঠা।
মারমা নারীদের তৈরি ছেছমা পিঠা ও অন্যান্য পিঠাপুলি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তবে মারমা আদিবাসীরা ঘরে মেহমান এলে ছেছমা, কাদা মু, কেইন্দা মু, খোওক তং মু পিঠা তৈরি করে তাদের আপ্যায়ন করে থাকে।
বিজ্ঞাপন
খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়াই। তাই প্রায় সময় খাগড়াছড়ি ও সাজেক আসা হয়। এখানে আসলেই সবাইকে নিয়ে এই ছেছমা পিঠা খাই। এই পিঠা অনেক সুস্বাদু। গরম গরম খেতে খুবই ভালো লাগে। যে কেউ প্রথম খাওয়াতেই এই পিঠার প্রেমে পড়ে যায়।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা পাইসাউ মারমা বলেন, আমাদের মারমা সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা ছেছমা। প্রাচীনকাল থেকেই ছেছমাসহ বেশ কয়েক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে মারমা সমাজে। এই পিঠা পাটিসাপটার মতো দেখতে তেলবিহীন। আকৃতি ও সৌন্দর্য সত্যিই আকৃষ্ট করে সবাইকে। তাই যে কেউ এ পিঠার ভক্ত হয়ে যায় প্রথম দেখাতেই।
নয়নতারা মারমা নামে এক পিঠা বিক্রেতা বলেন, আমরা সারা দিন সংসারের কাজকর্ম শেষ করে বিকেলে পানখাইয়া পাড়া রাস্তার পাশে বসে ছেছমা পিঠা বানিয়ে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৮০০-১০০০ টাকার পিঠা বিক্রি হয়। পিঠা তৈরি করতে যা খরচ হয়, তার অর্ধেক লাভ হয়। লাভের টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালাই। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি। এই পিঠা শুধু শীতকালে বিক্রি করতে পারি। শীতের সময়ে পিঠা বিক্রি করে আমাদের ভালোই লাভ হয়।
জাফর সবুজ/এসপি