লোকে জানত আমেরিকান ফুলের বাগান, মিলল ৫ শতাধিক গাঁজার গাছ
উঁচু উঁচু দালান কোঠার ভিড়ে প্রাচীরে ঘেরা একটি জমি। ভেতরে চাষ হয় আমেরিকান ফুল- এমনটাই শুনে আসছিলেন এলাকাবাসী। তবে সেখানে মিলেছে গাঁজার বাগান। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খবর পেয়ে আশুলিয়ার খেজুর বাগানের মসজিদ রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাঁজার বাগানটি শনাক্ত করে পুলিশ।
তবে বাগানের মালিক সোহেল খান দাবি করেন এগুলো গাঁজার গাছ নয়। ফলে দুটি গাঁজার গাছ ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। টেস্টের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশ পাহারায় রাখা হয় পুরো বাগান।
সোমবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীরে ঘেরা বাগান থেকে বাতাসে ভেসে আসছে গাঁজার গন্ধ। ভেতরের সব গাছ কেটে ফেলেছে পুলিশ। কয়েকটি স্থানে গাঁজার গাছের স্তূপ। স্থানীয়রা কিছুই জানতেন না। তবে পুলিশ আসার পর তারা জানতে পারেন ভেতরে আমেরিকান ফুলের আড়ালে গাঁজা চাষ হয়।
স্থানীয় শাহজাহান মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকায় সোহেল সাহেবের বাংলো বাড়ি রয়েছে। তার কয়েকটি কারখানাও রয়েছে। আমি শুনেছি এই বাগানে আমেরিকান ফুল চাষ হয়। এ ফুল দিয়ে নাকি তারা তেল তৈরি করে বিদেশে রফতানি করবে। পরে পুলিশ আসার পর শুনি সোহেল সাহেব গাঁজা গাছের বাগান করেছেন।
বাগানের পাশের বাড়ির এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাগানের পাশের বাড়িতেই থাকতাম। মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ বের হতো। তখন আমরা মনে করেছিলাম ফুল গাছে মনে হয় কীটনাশক ছিটিয়েছে। আমাদের পাশেই গাঁজার বাগান কখনও ভাবিনি। মনে করেছিলাম গাঁদা ফুলের গাছ। আমাদের ছাদে উঠলে সবই দেখা যায়। বাগানের সব গাছ কেটে ফেলায় এখন ভালো লাগছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাগানের ভেতর সার্বক্ষণিক নজরদারি করেছি। এখানকার কেয়ারটেকার আমাদের বলেছেন প্রায় সব গাছ তিন থেকে চারটি গাছ থেকে কলম করে রোপণ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সোহেল খানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, আসলে এগুলো গাঁজা না। তবে গাঁজারই এক প্রকার জাত, যা নেশা হিসাবে গণ্য করা হয় না। গাঁজায় যে পরিমাণ‘হেম্প’ থাকে এই গাছে তা নেই। এসব গাছ থেকে তেল উৎপাদন করে আমরা বিদেশে রফতানি করার জন্য পরীক্ষামূলক গাছ লাগিয়েছিলাম।
আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক এমদাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা খবর পাই আশুলিয়ার খেজুরবাগান মোল্লা বাড়ি গলিতে সোহেল হোসেনের জমিতে গাঁজার বাগান রয়েছে। তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে বাগান মালিকের দাবি ছিল এগুলো গাঁজার গাছ নয়। তাই স্যাম্পল সংগ্রহ করে সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে বাগানটি পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়। প্রাথমিকভাবে সোহেল ও তার ছেলেকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আশুলিয়া থানা পুলিশের অপর উপপরিদর্শক সুদীপ কুমার গোপ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সিআইডিতে পাঠানো স্যাম্পলের রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী বাগানে যেসকল গাছ চাষ করা হয়েছিল সেগুলো গাঁজার গাছ। দুপুরে গাঁজার গাছগুলো কেটে জব্দ করা হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক গাছ ছিল বাগানে।
প্রসঙ্গত, তিন মাস আগে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। সোহেল হোসেন নামে ওই ব্যবসায়ী জমি কেনাবেচা, বাড়ি তৈরি ও কেনাবেচার কাজ করতেন। এছাড়া তার শিল্প প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
মাহিদুল মাহিদ/আরএআর