ঘাট নেই, তবুও নিয়মিত টাকা তোলেন ইউপি সদস্য
ঘাটের ইজারা বন্ধ এক বছর ধরে। কিন্তু এখনও থামেনি টাকা উত্তোলন। টাকা না দিলে মারধর করা হয় যাত্রীদের। আর এ কাজটি করছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। তিনিই মূলত যাত্রীদের জিম্মি করে বিআইডব্লিউটিএর নামে টাকা উত্তোলন করছেন। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের লঞ্চঘাটে।
জানা গেছে, ধুলখোলা খেয়াঘাট থেকে একই ইউনিয়নের প্রধান বন্দর আলীগঞ্জ হয়ে পাশের ইউনিয়ন উলানিয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী ইঞ্জিন নৌকা চলাচল করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পরপর অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারগুলো আসা-যাওয়া করে। যদিও ধুলখোলার পন্টুন ডুবে যাওয়ায় নৌ স্টেশন বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। সেইসাথে ইজারা দেওয়া বন্ধ রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানটি। অভ্যান্তরীণ নৌ পরিবহনের বিধান অনুসারে ইজারা না থাকলে সেই ঘাটে টাকা উত্তোলন অবৈধ। বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে, ধুলখোলা লঞ্চঘাটের পন্টুন প্রত্যাহার করে চাঁদপুরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই লঞ্চঘাটের ইজারা দেওয়া হচ্ছে না।
কিন্তু ধুলখোলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন রাঢ়ী তার সহযোগীদের নিয়ে ঘাটটি দখলে রেখে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে ঘাট ফি আদায় করেন।
স্থানীয় জেলে আব্দুল হাকিম মোল্লা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ যখন ইজারা দিয়েছিল তখন ৫ টাকা করে ঘাট টিকিট দেওয়া হতো। ইজারা নেই প্রায় এক বছরের বেশি সময়। এখন সেখানে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
আরেক যাত্রী রেহানা খানম বলেন, মানুষের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করে টাকা আদায় করে মেম্বারের লোকজন। কেউ আপত্তি জানালে তাকে মারধর করা হয়। আমার চোখের সামনে অনেককে মারধর করতে দেখেছি। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ঢালী। তিনি জানিয়েছেন, ধুলখোলা লঞ্চঘাটের পন্টুনটি এক বছর আগে ডুবে যাওয়ায় লঞ্চঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বছরও ঘাট ইজারা দেয়নি বিআইডব্লিউটিএ। আমি মৌখিকভাবে শুনেছি ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সেখান থেকে ঘাট ফি উত্তোলন করছেন। এমন কাজ উচিত না। তিনি জানান, পানি কমে যাওয়ায় ঘাটটিতে লঞ্চ আসে না।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, পন্টুন প্রত্যাহার করে অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সেখানকার ইজারাও বাতিল করা হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার কোনো রাজস্ব উত্তোলন করছে না। ইজারা না থাকলে সেখানে কেউ টাকা উত্তোলন করলে তা নিয়মবর্হিভূত। বিআইডব্লিউটিএর টিকিট ব্যবহার করে ধুলখোলায় কেউ টাকা উত্তোলন যেন না করে এ সংক্রান্ত আইনি সহায়তার জন্য হিজলা থানাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যদিও হিজলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইউনুস আলী মিঞা বলেন, বিআইডব্লিউটিএর এমন কোনো চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পেলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওদিকে অভিযোগের বিষয়ে ধুলখোলা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন রাঢ়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও মুঠোফোন নম্বর রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস