জাকিরের সংগ্রহে সাড়ে ৩ হাজার বছরের পুরোনো কয়েন
সাড়ে ৩ হাজার বছরের পুরোনো কয়েন? কি শুনতেই অবাক লাগছে? এত পুরোনো কয়েন এখন দেখতে পাওয়াও বেশ আশ্চর্যের। তবে রাজশাহীর জাকির হোসেনের সংগ্রহে রয়েছে এমনই পুরোনো ৪৫৫টি দেশের কয়েন। শুধু তাই নয়, রয়েছে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো আলেকজান্ডার দি গ্রেটের সময়ের কয়েন।
৩৭ বছর বয়সী জাকিরের কয়েন জমানোর গল্পটা ২৮ বছর আগের। কয়েন সংগ্রহ এখন ভালো লাগা থেকে নেশায় পরিণত হয়েছে। কখনও কেনেন আবার কখনও ভ্রমণে গিয়ে, অনেক সময় বন্ধু বা কলিগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের কয়েন সংগ্রহ করেন তিনি। এভাবেই জাকিরের সংগ্রহে জাতিসংঘের ১৯৪টি দেশসহ ২৬১ ডেথকান্টির কয়েন (অস্টিয়ান ইমপায়ার, বেলজিয়াম, ব্রিটিশ হংকক, গায়ানা, হুন্ডুরাস, ইরাক, লিবিয়া যখন ব্রিটিশ ছিল তখনকার কয়েন) রয়েছে।
জাকির বলেন, ‘আমার বাবা চিকিৎসক ও মা নার্স। কর্মসূত্রে তারা লিবিয়ায় থাকতেন। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। পড়লাম সপ্তম শ্রেণিতে। সেই দেশের কয়েনগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। আমার কাছে আকর্ষণীয় লেগেছে। মূলত সেই দেশের কয়েনগুলো দিয়ে সংগ্রহ শুরু হয়। মূলত ছোটবেলায় ভালোবাসা থেকে এখন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়েন জমানো। সুলতান, মোঘল আমল ছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কয়েন সবই আছে। শুধু তাই নয়, রয়েছে আলেকজান্ডার দি গ্রেট, রোমান, মৌর্য ও সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের কয়েন।’
সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ ষষ্ঠিতলায় জাকির হোসেন খানের বাড়িতে দেখা যায় তার কয়েনের সংগ্রহশালা। তার ঘরের ওয়্যারড্রবের পুরো ড্রয়ার কয়েনে ভর্তি। শুধু তাই নয়, অ্যালবাম করে রাখা হয়েছে। একেকটি অ্যালবামের পাতায় কমপক্ষে ১২টি করে কয়েন রয়েছে।
প্রতিটি দেশের কয়েন প্যাকেটিং (কয়েন ফ্লিপ) করা হয়েছে। যাতে করে দুই পাশ থেকে কয়েনগুলো দেখা যায়। এছাড়া প্যাকেটের মাথায় দেশের নাম ও নিচে সাল উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে কয়েনগুলো ছোট ছোট প্লাস্টিকের বক্সের ভেতরে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেগুলো অ্যালবামের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জাকির জানায়।
জাকির হোসেন বলেন, কয়েনগুলো বিভিন্নভাবে জমিয়েছি। দুই বছর আগেও আমার কাছে সেনেগালের কয়েন ছিলো না। এক বন্ধু সুইজাল্যান্ডে থাকে, তাকে দিয়ে সেনেগালের কয়েন আনিয়েছি। এছাড়া কখনও বন্ধু-বান্ধবী, কখনও আত্মীয়দের মাধ্যমে কয়েন জমিয়েছি। সর্বশেষ চাকরি জীবনে এসে কলিগদের (সহকর্মী) মাধ্যমে কয়েন সংগ্রহ করেছি। কলিগরা বিভিন্ন দেশে গেলে তাদের বলি আমার জন্য সেই দেশের কয়েন আনার জন্য। তারাও কয়েন নিয়ে আসত।
অনেক সময় দেখা যায়, একটি দেশের দুইটি কয়েন সংগ্রহ করা হয়েছে। তখন সেটি আমার ছেলে জাহিন হোসেন খানকে (১০) দিয়ে দেয়। ওরও (জাহিন) কয়েন জমানো অ্যালবাম রয়েছে। তার কাছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অনেকগুলো কয়েন রয়েছে।
জাকির বলেন, ইস্ট ইন্ডিয়ার কয়েন নিয়ে গবেষণা করছি। বর্তমান পৃথিবীর সব দেশের কয়েন রয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত ছাড়াও অনেক বিলুপ্ত দেশের কয়েন আছে। এছাড়া অল্প কিছু সুলতান ও মোঘল আমলের কয়েন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কয়েন আছে। এছাড়া আলেকজান্ডার দি গ্রেটসহ অল্প কিছু রোমান, মৌর্য, সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের কয়েন আছে। অনেক সময় কয়েন কোন দেশের, নাম-সাল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তখন গুগলের সাহায্য নিতে হয়। বিভিন্ন বই পড়ে বের করি।
এসপি