নেইমারের প্রেমে মজেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিঠু
বিশ্বসেরা ফুটবলার পেলে ছিলেন একটি প্রজন্মের আইকন। মাঝে আরও কিছু কিংবদন্তি খেলোয়াড় এসে ব্রাজিলের ফুটবলকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। বর্তমান প্রজন্মের ব্রাজিল সমর্থকদের নয়নমনি ‘নেইমার দ্যা সিলভা সান্তোষ জুনিয়র’।
বিশ্ব ফুটবলের সূতিকাগার ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের ভক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আজহারুল হাসান মিঠু প্রতিপক্ষের আতঙ্ক সেই ‘নেইমার জুনিয়র’ এর প্রেমে মজেছেন।
একনামে যাকে স্টাইলিস্ট ‘নেইমার’ নামেই চেনে বিশ্ববাসী। নিজের ঘরের অভ্যন্তরে রঙের শৈল্পিক ছোঁয়ায় যেন জীবন্ত নেইমারকে তুলে এনেছেন। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর এই ঘরটিই হয়ে উঠেছে ব্রাজিল সমর্থকদের মিলনমেলার স্থান। দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কন হয়েছে ব্রাজিলের পতাকার রঙের আদলে নানা কারুচিত্র। নান্দনিকভাবে রঙে রঙে আঁকা নেইমার ও ব্রাজিলকে দেখতে এখন মিঠুর বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন সমর্থকরা। মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল মহল্লার মো. বাবুল হাসানের ছেলে। এছাড়াও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে কাব্যিক ফুটবল প্রদর্শন করা ব্রাজিলের খেলা পছন্দ করেন আজহারুল হাসান মিঠু। পেলের পর ফুটবল ইতিহাসে আলোড়ন তোলা ব্রাজিলের রোনালদো, রিভালডো, কার্লোস, রোনালদিনহোদের শেষ বিশ্বকাপ জয় দেখেছেন একদম ছোট বয়সে ২০০২ সালে। সেই থেকে আজও ব্রাজিলীয় নৈপুণ্যে মুগ্ধ মিঠু। পূর্বসুরীদের বিজয়ের ঝান্ডা উঁচু করে হলুদ ফুটবলকে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে নিচ্ছেন বর্তমান তারকা খেলোয়াড় নেইমার জুনিয়র। নেইমারের পায়ের যাদুতে এবার হেক্সা সম্পন্ন হবে- এমন প্রত্যাশা থেকেই অভিনব উদ্যোগে নিজের ঘরকে ব্রাজিল ও নেইমারময় করে তুলেছেন রঙের ছোয়াঁয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী বন্ধু আজফারুল আলম সামি মিঠুর ঘরটি ফুটিয়ে তুলেছেন শৈল্পিক নকশা ও কারুচিত্রে। এক পাশের দেয়ালে বড় করে আঁকা নেইমার, আরেকপাশে ব্রাজিলের পতাকা। বিছানায় ব্রাজিলের পতাকার পাশাপাশি বালিশের দুই পাশে নেইমারের ফ্রেম বাঁধানো দুটি বড় ছবি। ব্রাজিলের জার্সিসহ অন্যান্য উপকরণ তো আছেই। শয়নে-স্বপনে কিংবা জাগরণেও নেইমার আর ব্রাজিল।
অন্যান্য বিশ্বকাপকে ছাপিয়ে যাওয়া কাতার বিশ্বকাপ সবদিক থেকেই অনন্য। ব্রাজিলের হেক্সা বিজয় হোক বা না হোক, তাতে আনন্দের কমতি নেই ব্রাজিল সমর্থকদের। খবর পেয়ে বা ফেসবুকে ছবি দেখে অনেক ভক্ত আসছেন রঙে আঁকা নেইমারের সঙ্গে সেলফি-ছবি তুলতে। চলতি আসরের খেলাগুলোতে এ ঘর ভরে উঠে ব্রাজিলভক্তের সমাগমে। ব্রাজিলের খেলা থাকলে তো এই ঘরকে ঘিরে উচ্ছ্বাস থাকে আরও বেশি।
বাংলাদেশ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা জেলা ছাত্রলীগ নেতা মিঠু বলেন, নেইমারকে দেখলেই হৃদয়ে অন্যরকম ভালোলাগা জন্মে। বাড়ি করার সময় চিন্তা করেছিলাম, ঘরের অভ্যন্তরে ব্রাজিলের পতাকার রঙের আদলে রঙ করবো। এখনতো ব্রাজিল মানেই নেইমার, নেইমার মানেই ব্রাজিল। এজন্য নেইমারের প্রতি আমার এ ভালোবাসা।
মিঠু বলেন, ঘুম থেকে উঠেই যখন নেইমারকে দেখি, তখন ভালোই লাগে, যত দেখি, ততই ভালো লাগে।
ঘরটিকে নেইমার ও ব্রাজিলময় করে তুলতে কোনো পারিশ্রমিক না নেওয়া বন্ধু চারুকলার শিক্ষার্থী আজফারুল আলম সামি কেও ধন্যবাদ জানান মিঠু। এ বিশ্বকাপ নেইমারের হাতে উঠবে এমন প্রত্যাশা করে মিঠু বলেন, আমি যখন একদম ছোট ২০০২ সালে তখন ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছিল। এরপর আর জেতেনি। তাই আমিসহ অসংখ্য ভক্তকূলের আশা ব্রাজিলেই যাবে এবার বিশ্বকাপ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্রাজিল ভক্ত আতিকুর রহমান জানান- আজহারুল হাসান মিঠু ব্রাজিলের খাটি ভক্ত। আগের বিশ্বকাপগুলোতেও তাকে দেখেছি ব্রাজিলের সমর্থনে বিভিন্নভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে। এবার কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সে নিজের ঘরে নেইমার ও ব্রাজিলের পতাকা এঁকেছে। তার এমন আবেগ প্রকাশে খুশি ব্রাজিল ভক্তরা। অন্যরা যেখানে বাড়ির বাইরে দেয়ালে বা বাউন্ডারিতে প্রিয় তারকার বড় ছবি আঁকে, সেখানে মিঠু শোয়ার ঘরে ছবি এঁকে ব্যতিক্রম প্রেমের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে বলে মনে করি।
বাহাদুর আলম/এমএএস