পা ফেলার জায়গা নেই শিশু ওয়ার্ডে, মেঝে-বারান্দায় চলছে চিকিৎসা
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ায় শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১৫৮ জন শিশু। শয্যা সংকটের কারণে অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে।
সরেজমিনে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায় রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে। তাপদাহ আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে। ধারণক্ষমতার ৮ গুণ বেশি রোগী থাকায় নার্সরাও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩৫০ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেশিরভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে শত শত রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। ওয়ার্ডের ভেতরেও ভিড়। ভিড়ের মধ্যেই চিকিৎসক-নার্সরা সেবা দিচ্ছেন। ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ১৫৮ জন শিশু। রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ওষুধ পর্যাপ্ত থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। খাবার ও পোশাকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স রুপালি খাতুন বলেন, হঠাৎ করে এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডা, নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শয্যার চেয়ে ৮ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। নার্স রয়েছে ৬ জন। এত রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ভালোভাবে সেবা দেওয়ার জন্য। তবে রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত এক বছর বয়সী শিশুকে এক সপ্তাহ আগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন মা কেয়া খাতুন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। মাঝে-মধ্যে একবারের ওষুধ দুবার দিয়ে দেয়। নার্সদের ডাকতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। গ্যাস দিতে গেলে টাকা নেয়। চরম অব্যবস্থাপনা এখানে।
রোগীর স্বজনরা বলেন, আমরা কুষ্টিয়ার মানুষ এই হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে চিকিৎসা সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শয্যা, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এতে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি কমবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি। হাসপাতালে তাদের অফিস কক্ষেও পাওয়া যায়নি। শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আবহাওয়ার পরিবর্তন, গরম-ঠান্ডাসহ নানা কারণে শিশুরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও শয্যা সংকট থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রাজু আহমেদ/এসপি