‘আমার স্বামীকে পাথর মেরে হত্যা করেছে পুলিশ’
পুলিশের ধাওয়ায় ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনা নদীতে ভেসে যাওয়া মাছ ব্যবসায়ী নোমানের লাশ তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতখান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এছাড়া নিখোঁজ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ওদিকে নিহত যুবকের স্বজনরা দাবি করছেন, থানায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিতে চাইলেও পুলিশ শুধুমাত্র সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেছেন। পুলিশের ছোড়া পাথরের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে মেঘনা নদীতে তলিয়ে যান নোমান।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে স্ত্রী নাসরিন বেগম বলেন, আমার স্বামীকে পাথর মেরে হত্যা করেছে পুলিশ। আমার স্বামী বারবার তীরে ওঠার জন্য কাকুতি-মিনতি করলেও পুলিশ সেই সুযোগ দেয়নি। বরং সে যেন ডুবে মরে সেজন্য অপেক্ষা করেছে। আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করতো তাকে গ্রেপ্তার করতো-জেলে পাঠাতো। কিন্তু মেঘনা নদীতে ফেলে ডুবে মরতে বাধ্য করাটাও হত্যা। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১টার দিকে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পাতার খাল মাছঘাটের শ্রমিক ইসমাঈল, ফারুক, গনি ও নোমানসহ ৭ থেকে ৮ জন জুয়া খেলছিল। এ সময় দৌলতখান থানার উপ-পরিদর্শক স্বরূপ কান্তি পালের নেতৃত্বে সহকারী উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা, পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল ও মো. সজীব সেখানে গিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। ধাওয়ায় ফারুক, ইসমাইল, রুবেল ও নোমান মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দেন। তবে ফারুক, ইসমাইল ও রুবেল সাঁতরে তীরে উঠে আসতে পারলেও নোমান ওপরে উঠতে পারেনি।
নোমানের চাচাতো ভাই মনির বলেন, খবর পেয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি নোমান প্রথমে মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দিলেও পরে তীরে ওঠার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তীর থেকে পুলিশ সদস্যরা পাথর ছুড়ে মারায় উঠতে পারেনি। সেই ছুড়ে মারা একটি পাথরের টুকরো তার মাথায় আঘাত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকজনই আমাকে বলেছেন পুলিশের ছোড়া পাথর নোমানের মাথায় লাগার পরপরই রক্ত পানিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সে তলিয়ে যায়। তার মরদেহ আজকেও পাইনি।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরদিনই থানায় আমরা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। তারা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করে। আমরা অপেক্ষায় আছি পুলিশ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা দেখার জন্য।
স্বামীর অপেক্ষায় সন্তান নিয়ে নদী তীরে নাসরিন
মাছ ঘাটের শ্রমিক নোমান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাতারখাল মাছঘাটে বসে থাকেন স্ত্রী নাসরিন বেগম। সেই সাথে অপেক্ষায় থাকে ৭ বছরের ছেলে আবির। বিভিন্ন দিক থেকে খবর আসে লাশের। কিন্তু নাসরিন কোনো সংবাদই মেনে নিতে পারে না। তাদের ছোট্ট ছেলেটি বাবাকে খুঁজলেও এখনো বোঝেনি বাবা আর কোনোদিন ফিরবে না। যদিও নাসরিন বলেছেন, অন্তত মরদেহটা পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
নাসরিন বলেন, এই ছোট্ট ছেলে নিয়ে কার কাছে যাবো? আমরা দুনিয়ায় অসহায় হয়ে পরলাম। আমি কোনো টাকা-পয়সা কিচ্ছু চাই না। স্বামী হত্যার বিচার চাই।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে