এতিমদের ভুয়া তালিকা দেখিয়ে বছরের পর বছর সরকারি অর্থ আত্মসাৎ
ভুয়া এতিম দেখিয়ে বছরের পর বছর সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার তালা সদরের আল ফারুক শিশু সদন এতিমখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতিমখানায় কোনো এতিম শিশু না থাকার পরও গত তিন বছরে সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আল ফারুক শিশু সদন এতিমখানায় কোনো এতিম শিশু নেই। সরকারি খাতায় ৩৬ জনের নাম থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র পাঁচজন শিশু। এই পাঁচজনের প্রত্যেকের বাবা-মা আছেন বলেও স্বীকার করেছে শিশুরা। এদিকে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর ৩৬ জন এতিমের সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট উত্তোলন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী ইতোপূর্বে বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার শোকজ করা হয়েছে। গত তিন বছরে সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করেছেন তারা।
স্থানীয় কাজী জীবন বারী জানান, এতিমখানাটি শুরু থেকে খেয়াল করেছি। এখানে কোনো এতিম নেই। এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্টের টাকা নেওয়ার জন্য নামে মাত্র পাঁচজন ভুয়া এতিম দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শোকজ করেছিল তাদেরকে। ওখানে গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের লোকজন পরিদর্শন করতে গেলে পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসা থেকে বাচ্চাদের ভাড়া করে নিয়ে আসে।
এতিমখানার সাবেক সভাপতি মগবুল হোসনে বলেন, দুই বছর দায়িত্বে ছিলাম ঠিকঠাক মতো দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময়ে ৩৬ জন এতিম ছিল। বর্তমান অবস্থা জানা নেই। সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্টের টাকা মোট পাঁচ বার উত্তোলন করেছি। সব মিলিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো উত্তোলন করেছি।
ভুয়া এতিম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারিদিকে এতিম সংকট থাকায় এভাবে চলতে হয়। প্রতিষ্ঠান তো চালু রাখতে হবে। এতিম না থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের মত থেকে যাবে।
বর্তমান সভাপতি খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ছয় মাস হলো ক্ষমতায় এসেছি। আগে এখানে কি হয়েছে জানি না। তবে বর্তমানে ৩৬ জন এতিম রয়েছে এখানে। তাদের নিয়মিত খেতে দেওয়া হয়। তাছাড়া সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট একবারে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি আর আগামী ডিসেম্বর মাসে একবার উত্তোলন করব। সরকার থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই সামান্য টাকায় এতগুলো এতিমকে খাওয়ানোসহ অন্যান্য খরচ বহন করা কষ্টকর।
সরেজমিনে পাঁচজন এতিম পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, অন্যরা পড়তে গেছে বিভিন্ন মাদ্রসায়। তারা আসে আবার যায়, এভাবেই চলে। ভুয়া এতিম দেখিয়ে অর্থ আত্নাসাৎ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এতিম না থাকলে কোথায় পাবো? আপনি এতিম দিতে পারলে দেন।
তালা সমাজ সেবা অফিসার সুমনা শারমিন জানান, কিছু দিন আগে এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বারবার নজরদারি করা হচ্ছে। বাস্তবে সেখানে পাঁচজন বাচ্চা থাকলেও তারা খাতা কলমে ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা উত্তোলন করেন। কয়েক বছর এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত ক্যাপিটেশনের টাকা কাগজ-কলমে এতিম দেখিয়ে উত্তোলন করে আসছে। বাস্তবে পরিদর্শন করতে গেলে পার্শ্ববর্তী মাদরাসা থেকে বাচ্চাদের খেতে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে আসে। এভাবেই চলছে তাদের কার্যক্রম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, বাস্তবে এতিম পাওয়া খুব কষ্টকর তাই যাদের মা কিংবা বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেছে সে সকল বাচ্চাদের এখানে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে তাদের এলাকায় এতিম থাকলে এই মাদরাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
সোহাগ হোসেন/আরকে