জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ
হঠাৎ দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত কোনো ভবন যেখানে দীর্ঘ দিন কারও পদচিহ্ন পড়েনি। সবগুলো দেয়ালে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার দক্ষিণ সোন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন জরাজীর্ণ ভবনে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে।
জানা যায়, ১৯৫৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে কয়েক যুগ ধরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ২০০৭ সালে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও জায়গার সংকুলান হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। জং ধরা রডগুলো বের হয়ে আছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি চুইয়ে পড়ে ভবনের ভেতরে। এতে করে যেমন শঙ্কায় দিন পার করছে শিক্ষার্থীরা, তেমনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে তাদের ভয় করে। কখন যে দেয়াল ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে থাকে তারা। পলেস্তারা ভেঙে ধুলাবালি চোখে ও গায়ে পড়ে। পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হয়। জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড ভবনেই পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে। এতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।
অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কাছাকাছি স্কুল না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সন্তানদের পড়ালেখা করতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝে-মাঝে শোনা যায়, অনেক অফিসার এসে দেখে গেছেন। কিন্তু আজও কোনো নতুন ভবন হলো না।
আব্দুর রহমান নামে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলে, প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসি। ভবনে ফাটল আছে তাই ক্লাস করতে আমাদের ভয় হয়। বৃষ্টি হলে ক্লাস করা যায় না। পানিতে সব ভেসে যায়।
নুসরাত জাহান নামে আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলে, ভবন না থাকায় আমাদের বন্ধুরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা একটা নতুন ভবন চাই।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরাতন টিনশেড ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০০৭ সালে নতুন একটা ভবন হয়েছে। তবে সেখানে সবগুলো ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। নারী শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই। ভয়-আতঙ্ক নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। ইঞ্জিনিয়ার চার বছর আগে মৌখিকভাবে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনো কোনো ভবন হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছায়েফ উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি চার বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। আমরা প্রতিটি মুহূর্ত ঝুঁকির মধ্যে আছি। টিনশেড ভবনটি এতটা জরাজীর্ণ যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ভয়ে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। এছাড়া নতুন ভবনের জন্য আবেদন করবো।
হাসিব আল আমিন/এসপি