স্বামীর সমাধির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ‘স্কয়ার মাতা’ অনিতা চৌধুরী
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরবিদায় নিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরী। সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে পাবনা সদর উপজেলার বৈকন্ঠপুরের এস্ট্রাস খামারবাড়িতে স্বামী স্যামসন এইচ চৌধুরীর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
এ সময় অনিতা চৌধুরীর বড় ছেলে স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী, মেয়ে স্কয়ার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান রত্না পাত্র, মেজো ছেলে স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ছোট ছেলে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুসহ শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও অনিতা চৌধুরীর কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী,এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিসিআইএ’র সাবেক সভাপতি আলহাজ মাহবুবুর রহমান, পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানসহ ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার আতাইকুলা চার্চে অনিতা চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে আশা হয়। সেখানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে তার মরদেহ নিজ বাড়ি আতাইকুলায় এসে পৌঁছালে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে স্বজনদের মাঝে। পরে আতাইকুলা চার্চে অনুষ্ঠিত হয় মহীয়সী এই নারীর অন্তষ্টিক্রিয়া। সেখনে বিশেষ প্রার্থনা পরিচালনা করেন চার্চের ফাদার রুবেন সলিল বিশ্বাস। পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে বক্তব্য দেন মেজো ছেলে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী।
এ সময় অনিতা চৌধুরীর দেবর সমর চৌধুরী ও ভাতিজা সুদিপ্তা চৌধুরী, ভাতিজি জামাই স্যামুয়েল আশিষ বিশ্বাস বলেন, অনিতা চৌধুরী ছিলেন একজন মহীয়সীও কোমলমতি নারী। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। পাবনার মাটি ও মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। নিজের প্রার্থনায় দেশ ও মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট ফেলোশিপের সাধারণ সম্পাদক লিয়র পি সরকার বলেন, স্কয়ার গ্রুপের মাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন মিসেস অনিতা চৌধুরী। তিনি অসহায় শিশুদের কথা ভাবতেন। তাদের জন্য খাবার পাঠাতেন। তিনি ছিলেন লাখো মানুষের প্রাণশক্তি। সবসময় মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে মানবসম্পদ গড়ার বিষয়ে ভাবতেন। ব্যবহারে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী পেয়েছি আমরা । অনিতা চৌধুরীর মৃত্যু শুধু পাবনা নয়, বাংলাদেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
স্কয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্যামসন এইচ চৌধুরীর ব্যবসায়িক সফলতার পেছনের কারিগর ছিলেন অনিতা চৌধুরী। ১৯৩২ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন অনিতা। ১৯৪৭ সালের ৬ আগস্ট স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সন্তানদের লালন-পালন করে স্বামীর সকল সুখে-দুঃখে পাশে থেকে পরামর্শ দিতেন অনিতা চৌধুরী। তিনি পাবনার ধর্মবর্ণ সব মানুষের প্রিয় ছিলেন। তিনি পরোপকারী ও দানশীল ছিলেন।
স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর সহধর্মিণী স্কয়ারের প্রায় ৬৪ হাজার কর্মীকে নিজ সন্তানের মতো আদর-ভালোবাসা দেওয়ায় তিনি ‘স্কয়ার মাতা’ হিসেবে পরিচিতি পান।
প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৬মিনিটে ‘স্কয়ার মাতা’ অনিতা চৌধুরী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী ৮৬ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে মারা যান। চার বন্ধুর হাত ধরে ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করে স্কয়ার গ্রুপ। ওষুধের ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও পরে তা স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য, বস্ত্র, মিডিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তা সেবা, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স, হেলিকপ্টার ও কৃষিপণ্যে বিস্তার লাভ করে। স্কয়ারের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ২০টি।
রাকিব হাসনাত/আরএআর