টাঙ্গাইলে দোকানঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান
বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ তিন বছরেও শেষ না হওয়ায় দোকানঘর ভাড়া নিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। দোকান ঘেঁষে মানুষের আনাগোনা ও শব্দে চরম অস্বস্তি সত্ত্বেও দোকানঘরেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এতে পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের ডুমনীবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের পাশেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক তলা ভবনের কাজ শুরু করে শুধুমাত্র বেজ ঢালাই করে বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়েই তীব্র গরম ও খোলা দোকানঘরে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ডুমনিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে এক তলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণের কাজ পায় কাজী ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৩০০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও কাজটি শেষ হয়নি। বর্তমানে কাজটি বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এর আগে ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের পাশে একটি ও বাজারের পাশে আরেকটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। ছোট দুইটি টিন সেটের রুমে গা ঘেঁষে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করছে। একটি ক্লাসরুমের পাশে সিমেন্টের দোকান ও অপর আরেকটির পাশে দোকান ও হাটবাজার।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের টিনের ঘরটিই ভালো ছিল। এখন খোলা দোকানঘরে পড়তে হচ্ছে। আমরা যেখানে ক্লাস করি পাশেই সিমেন্টের দোকান রয়েছে। দোকান থেকে সিমেন্ট বের করার সময় অনেক ময়লা আসে। এছাড়া এখানে অনেক গরম। একটি রুমে ৪২ জন ছাত্রছাত্রী গাদাগাদি করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ক্লাসে অনেক শব্দ হয়। কবে যে আমরা নতুন ভবনে ক্লাস করতে পারব।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলেয়া আক্তার বলেন, দোকানঘরে ক্লাস করা খুবই কঠিন। এখানে প্রচন্ড গরম। এছাড়া মানুষের আনাগোনা ও বাজারের নানা শব্দের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগে একতলা ভবনের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু বেস ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলার পর থেকে দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে ক্লাস চলছে। এখন কবে নাগাদ ভবনের কাজ শেষ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সেটি কেউ বলছে না। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করা হোক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজী ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী কাজী সুমন বলেন, বর্তমানে সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের রেটে কাজ করা কঠিন। একটি বেজ তৈরি করতে ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়। শিক্ষা প্রকৌশলও বিল দিচ্ছে না। তাহলে কি দিয়ে কাজ করব! বিল পেলেই ভবনের কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় রাখা হয়েছে এবং তাদের পেমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ কাজটি দ্রুত শেষ করা হবে।
এমজেইউ