শ্রেণিকক্ষ সংকটে বারান্দায় পাঠদান
শেরপুরের নকলা উপজেলার গড়েরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রয়েছে মাত্র দুটি কক্ষ। যার একটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম আর অন্যটিতে পাঠদান। ১২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকা এ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে বারান্দায় বসেই করতে হয় ক্লাস।
বারান্দায় ক্লাস করার সময় বাইরে মানুষের হাঁটাহাটিতে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি ধুলাবালিতে ক্লাস করতে গিয়ে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এছাড়া একটি ছোট শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এতে অনেকের মধ্যেই অনীহােদেখা দিচ্ছে। বিদ্যালয়টি পৌর শহরে হলেও সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউ।
জানা গেছে, নকলা পৌর শহরের ২ নং ওর্য়াডের গড়েরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পুরাতন ভবন রয়েছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় গত তিন বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তখন থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ। এছাড়া রয়েছে শিক্ষক সংকট। চারজন শিক্ষকের প্রতিদিন ৬টির বেশি ক্লাস নিতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নেই কোনো সাড়া। অথচ উপজেলায় নিয়মিত ভালো ফলাফল করে আসছে বিদ্যালয়টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণের পরের বছর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। স্কুলটিতে বর্তমানে ১২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলের দুটি কক্ষ ও ছাদের স্টোর রুমে অফিস বানিয়ে কোনো রকমে কার্যক্রম চলছে।
রামিম হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলে, আমাদের স্কুলে রুম নাই। তাই আমাদের কষ্ট করে বারান্দায় বসে ক্লাস করান স্যার-ম্যাডামরা। বৃষ্টি এলে আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। শীতের সময় আমাদের কষ্ট করতে হয়। স্কুলের পাশে রাস্তা থাকায় গাড়ির শব্দে আমাদের বিরক্ত লাগে। যদি স্কুলে একটা নতুন ভবন করে দিত, তাহলে আমরা ঠিকভাবে ক্লাস করতে পারতাম।
আরেক ছাত্রী মীম বলে, বারান্দায় বসে ক্লাস করতে হয়, এজন্য আমাদের ক্লাসের অনেকেই স্কুলে ঠিকমতো আসে না। বাইরের ধুলাবালির কারণেও আমাদের সমস্যা হচ্ছে।
স্কুলের শিক্ষিকা মাহমুদা আরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে কক্ষ সংকট রয়েছে। ফলে শিক্ষার্ক্ষীদের বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করাতে হয়। বারান্দায় ক্লাস করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই বারান্দায় পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা অচিরেই ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে স্কুলটিতে। স্কুলের মাত্র দুটি কক্ষ আছে। এখানে পাঠদান কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কমকর্তা পার্থ পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষাবোর্ডকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। সরকারি কোনো বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ে আরেকটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হবে।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করব।
এসপি